চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ

সময়: 8:12 am - September 14, 2024 |

আনিছ আহম্মদ হানিফ চাটখিল উপজেলা প্রতিনিধিঃ নোয়াখালী চাটখিলে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল চিকিৎসায় জাহানারা আক্তার (২৮) নামে প্রসূতি এক মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

গত রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত জাহানারা উপজেলার রামায়ণপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের ব্যাগ বাড়ির জহির উদ্দিনের স্ত্রী।

জাহানারার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ডেলিভারী ডেট থাকায় গত ৮ তারিখ রবিবার সকাল ১১ টার দিকে জহির উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারাকে তারা চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিকেলে সিজার করবে সিদ্ধান্ত জানালে জহির উদ্দিন দুপুরের খাওয়া আনতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেন। হসপিটাল থেকে বের হলে শুনতে পায় সব ধরনের রুটিন চেকআপ না করে তারা জাহানারাকে সিজারিয়ান অপারেশন জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এত তাড়াতাড়ি সিজারিয়ান অপারেশনের বিষয় জিজ্ঞেস করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান ডাক্তার মোস্তাক আহমেদ চলে এসেছে, তিনি বেশিক্ষণ থাকবেন না দ্রুত সিজার করে ফেলতে হবে।

পরে সিজার সম্পন্ন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জহির উদ্দিন কে ডেকে এনে নবজাতক বাচ্চাকে কোলে দিয়ে বলে আপনাদের বাচ্চার একটু সমস্যা আছে নিচে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসেন সেই সাথে প্রসূতি জাহানারা আক্তারকে ও পর্যাপ্ত সময় ক্রিটিক্যাল পোস্ট-অপারেটিভ রুমে না রেখে জেনারেল বেডে দিয়ে দেয়, কয়েক মিনিট পরে জাহানারা আক্তার জীব্বা বের করে দিলে পরিবারের লোকজন জাহানারা মারা গেছে ভেবে শোরগোল শুরু করে। তখন হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার এসে বলে জাহানারা স্টক করেছে আপনারা দ্রুত অন্যত্রে নিয়ে যান। তখন জাহানারার পরিবারের সদস্যরা দেরি না করে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখানে তিন দিন আইসিইউ থেকে গতকাল বুধবার জাহানারা ইন্তেকাল করেন। পরে পরিবারের সদস্যগণ ১১ তারিখ বুধবার রাতে জাহানারা আক্তারকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

জাহানারার স্বামী জহির উদ্দিন বলেন, চাটখিল স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারের অবহেলায় আমার স্ত্রী জাহানারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তারা আমাদেরকে না জানিয়ে এবং সিজারের পূর্বে সকল রুটিন টেস্ট না করে আমার স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় এবং পরিকল্পিতভাবে আমার স্ত্রীকে হত্যা করে। এখন আমি আমার নবজাতক সন্তানসহ তিনটি সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত। আমি আমার পরিবারের সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে দ্রুত ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব।

উল্লেখ্য যে, চাটখিল স্কয়ার হাসপাতাল ও ডাক্তার খন্দকার মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে পূর্বে একাধিকবার ভুল চিকিৎসা সহ নানান ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসছে।
ডাক্তার মোস্তাক দীর্ঘদিন থেকে স্বৈরাচার সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা দিয়ে একাধিকবার মানুষ হত্যা করেও পার পেয়ে গেছে। সেই সাথে তার রয়েছে নিজস্ব সন্ত্রাসী ও গুন্ডাবাহিনী, কেউ কোন ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসলে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অভিযোগকারীকে শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের হেনস্থা করে থাকেন। আর ডাক্তার খন্দকার মুশতাক আহমেদ চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কর্মরত আছেন, সরকারি নিয়ম দুই বছরের বদলি কিন্তু তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে ফ্যাসিস স্বৈরাচারের দোসর হয়ে চাটখিলে নানা অপকর্ম করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আছে সার্জারি করার ডিগ্রী না থাকা পরেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার সকল প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার করে আসছেন। উপজেলার কোন বেসরকারি হাসপাতাল খন্দকার মোস্তাক আহমেদ কে দিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন না করলে সেই সকল প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আসেন এবং বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা প্রশাসন দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা সহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করে থাকেন। এছাড়াও তিনি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেলিভারি রোগীদেরকে তার পছন্দের মাসিক কন্টাক করা দুই একটি হাসপাতালে করে ওইসব হাসপাতাল থেকে মোটা অংকের উৎকোর্স গ্রহণ করেন।
ভুল চিকিৎসার বিষয়ে একাধিক সাংবাদিকগন চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সোহাগ এর নিকট জানার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার খন্দকার মোস্তাক আহমেদকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি নানান তালবাহানা করে অভিযোগগুলো এড়িয়ে যান।
নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুম ইফতেখার এর সাথে চাটখিল স্কোয়ার হাসপাতালের ভুল চিকিৎসা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খন্দকার মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ক কেউ এখনো জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় নাই লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
চাটখিল উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের দাবি অনতিবিলম্বে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোস্তাকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা অন্যত্র বদলি করার জোর দাবি জানান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর