গোদাগাড়ীতে ভোট ডাকাতি করে যাদের উত্থান
রাজশাহী প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ভোট চুরির ঘটনা মানুষের মুখে মুখে। বাংলাদেশের প্রতিটি আসনের কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট চুরির ঘটনা আওয়ামী লীগের আমলে নতুন কিছু নয়।কেউ কেন্দ্র দখল করেছে আবার কেউ নৌকা প্রতিকে প্রকাশ্যে শিলও মেরেছে। এভাবেই সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে বারবার নির্বাচিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এমন ঘটনায় বাদ যায়নি গোদাগাড়ী – তানোর (রাজশাহী -১) আসনটিও।জোর করে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির মত ঘটনা এই কেন্দ্রেও ঘটেছে। এই ঘটনায় জড়িত ছিল একাধিক নেতা ও কর্মী। রাজশাহীর এ আসনটিতে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর পাশাপাশি ভোট ডাকাতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গোদাগাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র অয়েজুদ্দীন বিশ্বাস,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক নাসিমুল ইসলাম নাসিম, গোলাম কাওসার মাসুম, যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন, আওয়ামী লীগ নেতা শামসুজ্জোহা বাবু ওরফে মডেল বাবু, ছাত্রলীগ নেতা হামিদ রানা অন্যতম।এছাড়াও গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার উপর হামলার খল নায়কও তারা।আড়ালে থেকে হামার নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা শোনা যাচ্ছে।
একটি সুত্র বলছে, যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে শামসুজ্জোহা বাবু ভোট ডাকাতি করেছেন মাঠ পর্যায়ে। আওয়ামী লীগের আমলে এই দুই নেতার ভয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের অনুপস্থিতি লক্ষণীয় হয়েছে। আব্দুল্লাহ ও মডেল বাবু দলবল নিয়ে রাতের আধারেই ভোট সম্পুর্ন করেছেন।বিনিময়ে এমপির কাছ থেকে হাতিয়েছেন কোট কোটি টাকা। দলীয় স্টীকার ব্যবহার করে থানার দালালী, গ্রেফতার বানিজ্যসহ বিচারকার্যেও ঠকিয়েছেন ন্যায্য বিচার প্রার্থীকে।আব্দুল্লাহ ও মডেল বাবু দুজনেই গড়েছেন কোটি টাকার ক্লিনিক, রাজশাহী সিটিতে কয়েকটি বসত ভিটা,ধানী জমিসহ প্রায় ৫০০ কোটির সম্পদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মডেল বাবুর মডেল হাসপাতালের অপচিকিৎসায় রোগির মৃত্যু হলেও দলীয় প্রভাবে তা চাপা পড়েছে। এখনো মুখ খুলতে চাইছে না কেউ। গোপনে রোগির সাথে দূর্ব্যবহার, অপারেশনে অতিরিক্ত অর্থ আদায়,ভুয়া ডাক্তার দিয়ে অপচিকিৎসা, নারী চিকিৎসা প্রার্থীদের যৌন হয়রানি করেছেন মডেল বাবু।
এক সময় মাইকিং করে মডেল বাবু জীবিকা নির্বাহ করতেন।কালের ফেরে মডেল বাবু হয়েছেন ক্লিনিকের মালিক।
পুকুর লিজ (টেন্ডারের) একটি অংশ ছিল এই দুই নেতার নেতৃত্বে। সরকারি রাজস্ব ফাকি দিয়েও পুকুর লিজ করিয়েছেন আব্দুল্লাহ ও মডেল বাবু।
২০১৮ সালে ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে মডেল বাবুর একটি ছবি ভাইরাল হয় ফেসবুকে।তাতে দেখা যায় পুকুর লিজের ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটছেন তিনি।এর সবই করতেন যুব নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশেই।গোদাগাড়ীর বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে বণিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারির পদও বাগিয়েছিলেন তারা।
মাইক বাবু থেকে মডেল বাবু হওয়ার পেছনের গল্পটি আওয়ামী লীগ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। বাবু ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের এমপি পদে নির্বাচনও করেছিলেন। সেখানে তিনি খরচ করেছিলেন প্রায় ২০ কোটি টাকা। একটি সুত্র বলছে এই টাকার উৎস হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা অয়েজুদ্দীন বিশ্বাস ও আব্দুল্লাহ।
এলাকাবাসী বলছেন, এই দুই নেতার এত জুলুমের পরও একটি মামলা হলো না।দেশে আইন এখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি।জোর করে মানুষের পুকুর দখল, জমি দখল করার পরেও তারা ঘুরছেন প্রকাশ্যে।
গুঞ্জন আছে বিএনপি নেতাদের কিছু অসাধু লোকেরা তাদের কাছে টাকা খেয়ে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। সরকার পতনের পর তারা একজন মাদক সম্রাটের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। রাজশাহী আমচত্বরের কাছে ইসলামি হাসপাতালের কাছাকাছি ঐ বাড়িতে তারা আশ্রয় নেন।
যুবনেতা আব্দুল্লাহ মাদক ব্যবসা, পুলিশের যোগসাজশে মাদক কারবারিদের থানায় এনে টাকা আদায় সহ অবৈধ ব্যবসায়ীদের আশ্রয় -প্রশ্রয় দাতা হিসেবেও পরিচিত বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।