বৌদ্ধ বিহার ট্র্যাজেডি: এক যুগেও খোঁজ নেই সেই উত্তমের

সময়: 8:05 am - September 29, 2024 |

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের রামু ট্র্যাজেডির ১২ বছর পূর্ণ হলো। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধপল্লির ২৬টি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন পুড়িয়ে দেয়া হয় উখিয়া-টেকনাফের আরো ৭টি বৌদ্ধ বিহার। তবে সে রাতের সহিংসতা ভুলে থাকতে চান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। ১২ বছরে রামুতে যে সম্প্রীতি ফিরেছে সেখানে নতুন করে ক্ষত তৈরি করতে চান না।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের রামু সীমা বিহার বৌদ্ধ মন্দির ঘুরে দেখা যায়, পূজা-অর্চনায় মগ্ন বৌদ্ধ ধর্মভীরু মানুষ। প্রদীপ শিখার আলোয় বুদ্ধ মূর্তির পদতলে নির্ভয়, স্বতঃস্ফূর্ত নতমস্তক আরাধনায় বিভোর। মধু পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে এদিন গৌতম বুদ্ধের ভক্ত অনুরাগীরা রামুর সকল মন্দিরে মন্দিরে পূজা-প্রার্থনায় নিবেদিত আছেন।

বৌদ্ধরা জানান , আমরা এখন ভালো আছি। এখন সব ধর্মের মানুষের সাথে মিলে -মিশে সুন্দর একটি সমাজে বাস করছি আমরা।

তবে অনেকের মনে অজানা কষ্ট, হামলার ১২ বছর হলেও সে ঘটনার হামলাকারীদের পরিচয় অজানা থেকে যাওয়ায়।

কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের প্রধান ভিক্ষু জানান, রামুর ধর্মীয় সম্প্রীতিতে যারা আঘাত হেনেছিল তারা সফল হয়নি।

রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ মহাথের বলেন, যে ক্ষতের তৈরি হয়েছিলো, ১২ বছরে আমরা সবাই মিলে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি।

আইনজীবীরা জানান, মামলার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না চাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে।

ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সাথে যোগাযোগ করেও ঠিকমতো সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছেনা। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইনজীবীরা।

সেই সময় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়। এতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে আপোসের ভিত্তিতে একটি মামলা প্রত্যাহার হলেও বাকি ১৮ মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে রামুর বৌদ্ধবিহার ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। ওই দিনের হামলায় কয়েকশ বছরের প্রাচীন ১২টি বৌদ্ধবিহার ও ২৬টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও বৌদ্ধবিহার ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলোতে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

এ ঘটনার ১২ বছরে এসেও সেই উত্তম বড়ুয়ার কোনো খোঁজ জানেন না তার বাবা ও মা। এমন কি উত্তম বড়ুয়ার স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখন কোথায় আছেন তার তথ্যও দিতে পারেননি কেউ।

তবে উত্তম বড়ুয়ার বাবা সুদত্ত জানান, তার ছেলে দেশে আছে কি বিদেশ আছে তা জানেন না। সরকার চাইলে ছেলেকে তার কাছে ফিরিয়ে আনতে পারেন। মৃত্যুর আগে ছেলেকে দেখতে চান তিনি।

উত্তমের মা মাধু বড়ুয়া জানান, ১২ বছর আগে সংঘঠিত ঘটনাটিতে উত্তম কোন ভাবেই জড়িত নন। উত্তমকে ফিরে আনা হলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে। ছেলেকে ফিরিয়ে আনার দাবি মায়ের।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর