এনআইডি নিয়ে ফের রশি টানাটানি শুরু

সময়: 9:55 am - March 5, 2025 |

মানব কথা: জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন (এনআইডি) নিয়ে আবার রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ এ সেবাটি নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন’ নামে নতুন একটি পৃথক কমিশনের অধীনে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সরকারের সে প্রচেষ্টায় আবারও বাদ সাধছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সংস্থাটি বলছে, দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকদের এ সেবাটি নির্বাচন কমিশনই দিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে কমিশনের দক্ষ জনবলও রয়েছে। কিন্তু সেসব বিবেচনায় না নিয়ে বিগত সরকার ইসি থেকে এনআইডি সেবা সরিয়ে নিতে আইন পাস করেও ব্যর্থ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথে হাঁটছে। ফলে সেবাটি নিজেদের কাছে রাখতে সরকারকে আবারও চিঠি দেওয়া হবে।

বর্তমানে এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনে এবং জন্মনিবন্ধন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের আলোকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি নিয়ে পৃথক একটি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুধু তা-ই নয়, বিয়ে, বিয়েবিচ্ছেদ ও দত্তকনিবন্ধন এবং মৃত্যুনিবন্ধনও হবে প্রস্তাবিত ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন’ নামক এ সংস্থার অধীনে। নাগরিকদের একই ছাতার নিচে নিবন্ধন সংক্রান্ত সব সেবা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন শীর্ষক একটি চিঠি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবকে পাঠানো হয়।

এতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা ও জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক। এ উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহিত আলোচনাপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করা যেতে পারে।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে সিদ্ধান্ত দেন। আর সে সিদ্ধান্তের আলোকেই নতুন কমিশন গঠন ও নিবন্ধন সংক্রান্ত নাগরিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনার দিকে এগোচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছেন তা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত করবে। এর আগে তড়িঘড়ি করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই কোনো এক পক্ষের স্বার্থ এখানে রয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

শুধু তাই নয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারও (সিইসি) এনআইডিকে ইসি থেকে হাতছাড়া করতে রাজি নন। সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সরকার নিয়ে গেলে সমস্যা হবে। সেজন্য এনআইডি ইসির অধীনেই থাকা উচিত। এমনকি জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ইস্যুটি সামনে আসায় প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। সিইসি বলেন, এখন ভোটার নিবন্ধন চলছে, সামনে জাতীয় নির্বাচন আছে। এর মধ্যে সরকার এটা নেবে, এমন আলোচনায় ইসি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। এনআইডি কার্যক্রম ইসিতেই থাকা উচিত।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর