ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পিকুল’র বিরুদ্ধে আ: লীগকে পুনর্বাসন ও লুটপাটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বাবরা-হাচলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পিকুল শেখের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার হাত থেকে নারী, বয়োবৃদ্ধ কিংবা নিজ দলের কর্মীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। পিকুলের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে তিনি একের পর এক অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। এতে দলের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় বাবরা হাচলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পিকুল শেখের নেতৃত্বে তার লোকজন উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি মিলন মোল্যার লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ফরহাদ শেখ গুরুত্বর আহত হন। তাকে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এছাড়াও মিলন মোল্যার সমর্থক বিএনপির কর্মী মকিম, দিলু শেখ ও কামাল কাজী গুরুত্বর আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কালিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি ও কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান আত্তাব তার লোকজন নিয়ে খিচুড়ি পার্টির মাধ্যমে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পিকুল শেখের গ্রুপে যোগদান করেন। এরপর থেকে তারা উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি মিলন মোল্যার লোকজনকে কোণঠাসা করে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন।
সম্প্রতি এলাকায় একটি বাশের সাকো বাধাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। মীমাংসার জন্য গত রোববার থানার ওসি দুই গ্রুপকে থানায় ডাকেন। ওই সময় থানা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার সরদার পিকুল শেখের পক্ষ নিয়ে মিলন মোল্যার উপর চড়াও হয় এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তখন আলোচনা পণ্ড হয়ে যায়। পরদিন সোমবার বিকেলে কাঞ্চনপুর খেয়াঘাটে মিলন মোল্যার সমর্থকদের ওপর পিকুলের নেতৃত্বে আরিফ, তকিবুর, ইকবাল গাজী ও টুকুসহ আরো কয়েকজন লাঠি, রামদা, ভেলা, সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ফরহাদ শেখ, মকিম, দিলু শেখ ও কামাল কাজী মারাত্মক আহত হন। পরে ক্ষুদ্ধ হয়ে মিলন মোল্যার লোকজন সংগঠিত হয়ে তাদের ধাওয়া দিলে এলাকা ছাড়া হয়। এসময় সংক্ষুদ্ধরা পিকুল ও তার ভাই ডাকুর দোকান ভাংচুর করে। এদিকে দোকান ভাংচুরের পাল্টা প্রতিশোধ নিতে পিকুল শেখের নেতৃতে নব্য বিএনপি আত্তাব, বখতিয়ার, টুকুসহ আরো কয়েকজন আজ মঙ্গলবার সকালে মিলন মোল্যার সমর্থক বেলায়েত শেখ ও মিজু শেখের দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসময় দোকানের পাশে থাকা স্থানীয় এক মহিলাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে পিকুল ও তার লোকজন। খবর পেয়ে মিলন মোল্যার লোকজন সংগঠিত হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসলে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এরআগে গত ১৭ নভেম্বর বাবরা-হাচলা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বোর্ড অফিসের কর্মকর্তাদের বেদম মারপিট এবং ওএমএস এর চাল একাধিকবার লুটপাট করে নেওয়ার অভিযোগ রযেছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পিকুল শেখের বিরুদ্ধে। তারও আগে এলাকার সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার শেফালী বেগম কথামতো কাজ না করায় তাকে বেদম মারপিট করে হাত ও পা ভেঙ্গে দেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পিকুল শেখ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাহবুর মোল্যা সাংবাদিকদের বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই পিকুল শেখ ও তার লোকজন ফরহাদসহ অন্যদের ওপর হামলা করেছে। কোনো পূর্ব শত্রুতাও ছিল না। এ ঘটনায় বাবরা-হাচলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পিকুল শেখের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে কালিয়া উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি মিলন মোল্যা সাংবাদিকদের বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি, উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। কালিয়া থানার ওসি জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলা করে পার পাবে না। ব্যবস্থা নেয়া হবে।