সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই, প্রয়োজন নির্বাচিত সরকার : মির্জা ফখরুল

মানব কথা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হাসিনা এমনি এমনি বা হঠাৎ করে পালায়নি। বহুদিনের আন্দোলন, বহু মানুষের রক্ত, কান্না, ত্যাগ ছিল। ১৭ বছর হাসিনা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। মানুষ কথায় কথায় হত্যা গুম করেছিল। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি। সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। প্রয়োজন নির্বাচিত সরকার। নির্বাচিত সরকারের চেয়ে কোনো সরকার শক্তিশালী হতে পারে না।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে সিলেট বিএনপি আয়োজিত বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. ইউনুসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ড. ইউনুস লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। মানুষের কাছে যান, সুন্দর ব্যবহারে মানুষের ভালোবাসা জয় করুন। আমাদের বিরুদ্ধে যাতে খারাপ কথা বলতে না পারে। জমি দখলবাজ, চাঁদাবাজ যাতে কেউ না বলতে পারে এভাবেই চলতে হবে। সবাইকে সুন্দর হয়ে চলতে হবে। আপনারা ভালো করলেই জয় আমাদের নিশ্চিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, সিলেটের পুণ্যভূমিতে আসলে মনে শান্তি আসে। তাই সুযোগ পেলেই এখানে ছুটে আসি। এই পুণ্যভূমি থেকেই ইসলামের আলো ছড়িয়েছিলেন হজরত শাহজালাল, শাহ পরান অলি আউলিয়ারা। তারা সত্য ও সুন্দর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাছাড়া সিলেটে তারেক রহমানের শ্বশুর বাড়ি। তাই এখানে আমাদের প্রত্যাশাও বেশি।
আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ১৭ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর একটি শুভ সময় এসেছে, হাসিনা পালিয়ে চলে গেছে। কিন্তু হাসিনার দোসররা এখনো দেশ ছাড়ে নাই। তারা সচিবালয় থেকে শুরু করে জেলা উপজেলার প্রশাসনে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তারা চায় না সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আর একদল লোক আছে মসনদে বসে পাঁয়তারা করছে নির্বাচন না দিয়ে কীভাবে অনেকদিন ক্ষমতায় থাকা যায়। আবার একেক রাজনৈতিক দল একেক কথা বলছে। কেউ একজন পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের কথা বলছেন। পিআর বাংলাদেশের জনগণ চেনে না। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ প্রচলিত আইনেই নির্বাচন হবে। আর তা নাহলে ১৭ বছর বিএনপি গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। জনগণও সব আন্দোলনে পাশে ছিল। আগামীতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আবার আন্দোলন হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত হাসিনার পতনের জন্য যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মরণ করি। আমরা হাসিনা মুক্ত হয়েছি কিন্তু ষড়যন্ত্র মুক্ত হই নাই। বিএনপির বিরুদ্ধ সবাই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা দেখতে পারছি, একটি দল যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তারা একেক দিন একেক কথা বলছে। কখনো বলছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, কখনো বলছে ভোটের পরিস্থিতি হয়নি, কখনো বলছে নির্বাচন হলে অসুবিধা নাই, কখন কি বলে ঠিক নেই। তবে এটা বুঝা যায় যে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিকের সভাপতিত্বে এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক হোসেনের যৌথ পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, আরিফুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির তাহসিনা রুশদী লুনা, ডা. এনামুল হক চৌধুরী, জাহিদুর রহমান, ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং যুগ্ম সম্পাদক খাইরুল কবির খোকন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, কলিমউদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য নিপুণ রায়, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।