প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে: যুবদল সভাপতি

সময়: 9:55 am - July 12, 2025 |

মানব কথা: যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেছেন, ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখে দেশে একটি অরাজক অবস্থা ধরে রাখতে চাইছে। এর মাধ্যমে জাতির বহু প্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে।’

আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ আয়োজনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

লিখিত বক্তব্যে মুন্না বলেন, ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে।

এমন সময় একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং কুরুচিপূর্ণ বিবৃতি দেওয়া শুরু করেছে। এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা এ বিষয়ে চরমভাবে ব্যর্থ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি সরকার পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে যাতে করে দেশে বিশৃঙ্খলা চলমান থাকে এবং সেই অজুহাতে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া যায়।

একটি বিশেষ মহল, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার পরিবর্তন চায় না, তারাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে। এরা চায় দেশে আরও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ুক। সরকারের একটি অংশ তাদের এ ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে এবং অপরাধ দমনে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার আহ্বান জানিয়েও দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করাতে পারিনি। সম্প্রতি তরুণদের মাঝে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, যারা নিজেদের তরুণদের একমাত্র প্রতিনিধি দাবি করে, তাদের সে দাবির বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে। তরুণরা বরং বহু লড়াই-সংগ্রামে প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী শক্তি বিএনপির ওপর আস্থা রাখছে। জরিপে উঠে এসেছে, অধিকাংশ তরুণ আগামীতে বিএনপিকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই জরিপ প্রকাশের পর থেকেই একটি গোপন সংগঠন ও তাদের পরিচালিত একটি অপরিপক্ব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে নানা ষড়যন্ত্রে জড়িয়েছে।’

মুন্না বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই। আপনারা দ্রুত আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটান। প্রয়োজন হলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, আপনারা সতর্ক থাকুন। যেন কোনো রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানী বা অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠী আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রাজধানীর চকবাজারে যুবদলের কর্মী ও ব্যবসায়ী মইনকে পাথর দিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় সমগ্র জাতি হতবাক। আমরা এই বর্বরতার তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। আধুনিক যুগে এমন আদিম হিংস্রতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় যেসব যুবদল ও ছাত্রদল কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের দায়িত্ববোধ থেকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাদের ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজে সনাক্ত করা গেছে, তাদের মামলায় প্রধান আসামি করা হয়নি – এটি বিস্ময়কর।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা প্রাণঘাতী হামলায় জড়িত, তারা এখনও ধরা পড়েনি। কেন এই বিলম্ব, তা বোধগম্য নয়। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, মূল অপরাধীদের বাদ দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। খুনের ঘটনার ৬০ ঘণ্টা পার হলেও প্রকৃত আসামিরা ধরা না পড়া এক বড় প্রশ্ন।’

মুন্না বলেন, ‘গত এক বছরেও দেশে আইনশৃঙ্খলার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি, বরং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। শুক্রবার খুলনায় যুবদলের বহিষ্কৃত এক নেতাকে গুলি করে এবং রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান প্রতিবাদ নেই। চাঁদপুরে এক ইমামের ওপর খুতবা দেওয়ার সময় হামলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহে কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল এবং পরে ছাত্রদল নেতা সাম্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরও আগে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা পারভেজকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে স্থানীয় এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর