গণপূর্তের প্রকৌশলী ইলিয়াসের বিরুদ্ধে টেন্ডার বাণিজ্য ও সচিবালয়ে আন্দোলনে অর্থ যোগানের অভিযোগ

সময়: 1:23 pm - July 28, 2025 |

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাফিয়াখ্যাত ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস আহমেদ ঢাকার বাহিরে গিয়েও টেন্ডার বানিজ্যে করে সচিবালয়ে আন্দোলনে অর্থ যোগান দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সিলেট গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস আহমেদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রধান প্রকৌশলীর প্রজ্ঞাপন অমান্য করে তিনি এলটিএম পদ্ধতির পরিবর্তে ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান ও টেক অনুমোদনের মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিচ্ছেন। টেন্ডার বাণিজ্যের এ মহাউৎসব থেকে অর্জিত অর্থ ছাত্রলীগ ক্যাডার নেতাদের মধ্যে বিতরণ করে বাংলাদেশ সচিবালয়সহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি বিরোধী তাণ্ডব চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা ছাত্রলীগের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সচিবালয়ে অরাজকতা সৃষ্টিতে এবং সরকার পতনের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন ছাত্র হত্যার মামলার আসামী, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাফিয়াখ্যাত প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াস আহমেদ। আজিমপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালীন সময়ে টেন্ডার বাণিজ্য ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অগ্রিম বিল পরিশোধের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলছে। দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “প্রকৌশলী ইলিয়াসের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে।” সিলেট গণপূর্ত বিভাগের এপিপি কাজের ওটিএম পদ্ধতির দরপত্র আইডি গুলো হলো: ১০৯৯১০৪, ১০৮৭৩৪৩, ১০৫৫৫৯৮, ১০৩৮৬৬৫, ১০৩৮২৯৮, ১০৩৭৪৭৯, ১০২৯৯৯০, ১০২৯১৬৭, ১০২৮০৮৫, ১০২৭৬৯৯, ১০২৭৫৮৯, ১০২৫৩২২, ১০১৩০৭৬ ও ১০১১৬৬৩। এই ওটিএম পদ্ধতির কাজগুলোর দরপত্র পছন্দের ঠিকাদারদের ১০% কম রেটে কোট দিয়ে কাজ পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইলিয়াস আহমেদ ও মোঃ আবু জাফরের সিন্ডিকেট। প্রাক্কলন অনুমোদন ও টেক অনুমোদন পর্যায়ে ১০% কমিশন নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াস কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিলেট গণপূর্ত সার্কেলে যোগদানের পর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াস আহমেদ তার সঙ্গে সিলেট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাফর, হবিগঞ্জের সাকিবুর রহমান, মৌলভীবাজারের মাহামুদুল হাসান ও সুনামগঞ্জের নাজমুল হাসান হিরাকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা এপিপির কাজ এলটিএম পদ্ধতির বদলে ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান অনুমতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইলিয়াস আহমেদ ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার’ অন্যতম দোসর হিসেবে পরিচিত। ঢাকার প্রশাসনিক পদ থেকে সিলেটে বদলির মাধ্যমে নিজেকে নজরদারি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। সিলেটে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে সিন্ডিকেটের কার্যক্রম জোরদার করেছেন। মোঃ আবু জাফরকে নিজের শিষ্য বানিয়ে সিলেট ক্যান্সার, হার্ট ও কিডনি হাসপাতালের ডিপিপির বাহিরে ১৮ কোটি টাকার দরপত্র (আইডি: ১০৯০৬৬১) আহ্বান করিয়ে দিয়েছেন। এ কাজে ফ্যাসিবাদি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০% কমিশন নিয়েছেন এবং টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের রিজিওনাল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি প্যাকেজ একত্রিত করে ঢাকার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। সাব-স্টেশন, এসি সাপ্লাই, জেনারেটর, ইলেকট্রিক ক্যাবেল, ইন্টারনেট, টেলিফোন ক্যাবেল সাপ্লাই ও সিসিটিভি ক্যামেরাসহ এক অভিনব শর্ত দিয়ে দরপত্র (আইডি: ১০৮৯০২১) আহ্বান করেছেন, যা ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ এককভাবে কাজ করতে পারে না।

সিলেট সার্কেল ‘ইলিয়াস সিন্ডিকেটের’ জিম্মি হয়ে পড়েছে। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ড্যামি নির্বাচনে খুনি হাসিনাকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সর্ব প্রথম ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ইলিয়াস আহমেদ।

ইলিয়াস একাধিক ছাত্র ও জনতা হত্যা মামলার আসামী। তাকে এখানো বিচার আওতায় আনা না হলে স্বাধীন দেশ নিরপত্তাহীনতায় মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে তার সিন্ডিকেটের হাতে সিলেট গণপূর্ত বিভাগের তিনটি প্রকল্পের দরপত্র (আইডি: ১১১২১১৬, ১১০৩৮৭০ ও ১১০৩৭৬০) লাইভ রয়েছে। টেন্ডার মাফিয়াখ্যাত ইলিয়াস ব্যস্ত সময় পার করছে বলে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছে। সিলেট গণপূর্ত বিভাগের দুইটি বড় কাজের দরপত্র আহবান করেছেন যা থেকে মোটা কমিশন নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং তার নিজস্ব পেটোয়া বাহিনীর মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীদের মাঝে অর্থ বিতরণ করছেন।

সিলেট গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আজ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম দোসর হিসেবে পরিচিত ইলিয়াস আহমেদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ ঠিকাদার, ছাত্র এবং জনতা।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর