জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারন করতে পারছেনা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ

সময়: 9:12 am - August 4, 2025 |

মানব কথা ডেস্ক: এ যেন সর্ষের ভিতরেই ভূত গত ২৭ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের স্থায়ী বাসস্থান প্রদানের নিমিত্ত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এর নিজস্ব জমিতে ৩৬ জুলাই আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মান প্রকল্প (মেয়াদঃ জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০২৯)” শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য (নতুন ও সংশোধিত) যে ১৩ টি প্রকল্পের নাম ছিল সে তালিকায় ১ নম্বরে ছিল। কিন্তু ২৭ জুলাই সকালে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় “৯০০ টাকার পিলার ৪০ হাজার, জুলাই শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য আবাসন প্রকল্পে হরিলুট “ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ফলে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়নি। যার দরুন ৫ আগস্টের পূর্বে শহীদ পরিবারের জন্য দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প আর শুরু করা গেলোনা। ডিপিপিতে খসড়া প্রাক্কলন এর যৌক্তিকতা নির্নয়ে একাধিক কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু পত্রিকাটি যেভাবে খুটিনাটি কারিগরি দিক বিশ্লেষন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে তাতে এটা সন্দেহ করা অমূলক নয় যে জাগৃকের ভিতর থেকে কেউই এইসব তথ্য সরবরাহ করেছে। এই প্রকল্পটিতে মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে জাগৃকের ৮ একর জমি বিনামূল্যে দিয়ে দেয়া হবে, ফলে জাগৃকের একটি অংশ নাখোশ ছিল। এই অংশটির চাওয়াছিল সেখানে আবাসিক ফ্ল্যাট বানিয়ে বিক্রি করবেন। তাছাড়া সেখানে দীর্ঘদিন ভাড়া না দিয়ে কয়েকটি ভবনে বসবাস করতো অবৈধ ব্যক্তিরা, যাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেতেন জাগৃকের এই সিন্ডিকেট। অথচ খুব সন্তর্পনে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অপ্রয়োজনীয় প্রকপ্লগুলো চালু রেখেছে জাগৃক। সরকারের উচ্চমহল থেকে বারবার এসব প্রকল্প বাদ দেয়ার জন্য বলা হলেও একগুয়েমি করে সেই অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প চালু রেখেছে জাগৃক। এমনই একটি প্রকল্প হচ্ছে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় সাবেক পূর্তপ্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এর ফরমায়েশে নেয়া সাইট এন্ড সার্ভিসেস এর নামে প্লট প্রকল্প। এমন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে জনগনের করের টাকা ঢালা হচ্ছে কেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। শোনা যাচ্ছে জাগৃকের একজন সদস্য যিনি নিজেকে এন্টি ফ্যাসিস্ট ঘরানার দাবি করেন তিনি এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের স্বার্থ রক্ষার ঠিকা চুক্তি নিয়ে প্রকল্পটি জিইয়ে রেখেছেন। একই ভাবে কুষ্টিয়াতে মাহাবুব উল আলম হানিফের আওয়ামী পুনর্বাসন প্রকল্প , নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদেরের প্রকল্প; ঝালকাঠির নলছিটিতে আমির হোসেন আমুর ফরমায়েশী প্রকল্প গুলো এখনো চালু রেখেছে জাগৃক। আসলে এসব অপ্রয়োজনীয় ও জনগনের চাহিদা বিহীন প্রকপ্লে প্লট বরাদ্দ নিবেন বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও জাগৃকের নিজস্ব কর্মকর্তা কর্মচারি গন। প্রথমে বরাদ্দ পেয়ে ৫/৬ লাখ টাকা পর্যন্ত কিস্তির টাকা পরিশোধও করবেন, এরপর তারা সেই জমি ১ থেকে ২ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন দেখিয়ে ঘুষের টাকা ট্যাক্স ফাইলে জায়েজ করে নিবেন। এই পদ্ধতিতেই জাগৃকের সিন্ডিকেটের সদস্যরা ফুলে ফেপে শত কোটি টাকার মালিক। জুলাই যোদ্ধা প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ছিলেন পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে সুবিধা ভোগী। যেমুন সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয় ) আবু হানিফ। তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে শুরুর দিকে দুই বছর জগৃকের ঢাকা ডিভিশন ১ এ কর্মরত ছিলেন। এরপর গনপূর্ত অধিদপ্তরে রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ ঢাকায় নির্বাহী প্রকৌশলীর দ্বায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই গুলশানে শেখ রেহানার বাড়ি নাম মাত্র মূল্যে জমি বরাদ্দ ও সরকারি অর্থে ডুপ্লেক্স ভিলা নির্মান করে দেয়া হয়। সেসময় গোয়েন্দা সংস্থা ডিএনএ টেস্ট না করে কাউকে এমন পদে রাখতোনা। এসময় শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকীর সুনজরে আসেন। এর পরে ঢাকা ডিভিশন ১, তত্ত্বাবধাওয়ক প্রকৌশলী হিসাবে প্রাইজ পোস্টিং বাগিয়ে নেন। সর্বশেষ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে আওয়ামীলীগের আস্থা ভাজন হিসাবে ২০২৩ সাল থেকে গোপালগঞ্জ জোনে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সেখান থেকেই এই কর্মকর্তা ২০২৫ এর ফেব্রুয়ারিতে জাগৃকে সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয় ) হিসাবে আসেন। এরপরের ধাপে আছেন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঢাকা সার্কেল জনাব হারিজুর রহমান। হারিজুর রহমান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা এবং জুলাই এ ছাত্রজনতার উপর গুলিবর্ষনে জড়িত ও অর্থের জোগান দাতা হিসাবে মামলার আসামী। তিনি ঢাকার বাহিরে চাকুরী করেন নি বললেই চলে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঢাকার তিনটি ডিভিশনে তিনি উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পদে চাকুরি করেছেন। ঢাকার ভুমি দস্যু আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডনদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। তারা তার গোপন ব্যবসায়িক পার্টনার। অবৈধ দখল থেকে তিনি নিয়মিত মাসিক ভাতা পান। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুরে হাউজিং এর জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ মার্কেট তার কারনেই উচ্ছেদ করা যাচ্ছেনা। এসব প্রতিটি মার্কেটে তার বেনামে শেয়ার রয়েছে। এসব আণ্ডার ওয়ার্ল্ড ডনরাই তাকে ঢাকা সার্কেলে বসিয়েছে। ২০২৪ এর ডামি নির্বাচনের পর পূর্তমন্ত্রী র ম আ ওবায়দুল মোক্তাদির কে চার কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে তিনি এই পোস্টিং বাগিয়ে নিয়েছেন। ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় আবাসন খাত ধংসের এই কারিগরকে ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী যে উদ্দেশ্যে বসিয়েছিলেন তিনি এখনও তাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। নিজের জমিদারি থেকে কয়েক একর চলে যাবে বিধায় তিনি কিছুতেই জুলাই যোদ্ধা শহীদ পরিবার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হোক সেটি চান না। তাছাড়া প্রকল্পটি যেভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে বরাবরের মতো এন্সিলারি কাজ সমূহ বেনামে নিজের ফার্মেও করতে পারবেন না। ফলে তিনি এই প্রকল্প নিয়ে কতটুকু আন্তরিক সন্দেহ রয়েছে। ইতোমধ্যে ইলিয়াস মোল্লার স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে দুদকের মামলার সম্মুখীন হয়েছেন হানিফ-হারিজ সহ পাঁচ জন। তাই জনকন্ঠের এই সংবাদ অন্তর্ঘাত মূলক কিনা খতিয়ে দেখা দরকার।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর