বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডি আবু জাফরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ

সময়: 2:02 pm - September 18, 2025 |

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি চাঞ্চল্যকর চিঠিতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আবু জাফরের হাতে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত এক অর্থবছরে জেনারেল সার্ভিস ডিভিশনের টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন, প্রমোশনাল গিফট আইটেম, ক্যালেন্ডার, বার্ষিক প্রতিবেদন ছাপানো, ডিসম্যান্টল, রিপেয়ার এবং রেনোভেশন খাতে কয়েক শত কোটি অর্থের অনিয়মিত ব্যয় হয়েছে। এই দুর্নীতির মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মোহাম্মদ আবু জাফর, যিনি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জনাব নওশের আলী এএমডি এবং জনাব আবুল হাশেম ডিএমডি এবং সিএফওর যোগসাজশে কোটি কোটি টাকার তসরুপ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এবং জনগণের টাকার অপচয়ের একটি জঘন্য উদাহরণ।

অডিট রিপোর্ট অনুসারে, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন, প্রমোশনাল গিফট আইটেম, ক্যালেন্ডার, বার্ষিক প্রতিবেদন ছাপানো, ডিসম্যান্টল, রিপেয়ার এবং রেনোভেশন কাজে কোনো সঠিক আরএফপি বা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া, সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি) কার্যক্রমের নামে এই গিফটগুলো বিতরণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এই সব কাজের জন্য তাদের নির্ধারিত কয়েকটি কোম্পানিকে সরাসরি কনট্রাক্ট দেওয়া হয়েছে, যেখানে টেন্ডার প্রক্রিয়া পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এমডি আবু জাফরের নেতৃত্বে এই অনিয়মের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী, যারা অতিরিক্ত মূল্যে কাজ সম্পাদন করে বিপুল লাভ করেছে এবং আবু জাফেরকেও এর ভাগ দিয়েছেন।

উদাহরণস্বরূপ দেখা যায় যে টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের নামে প্রতি মাসে তিন কোটি দশ লক্ষ টাকা মাইন্ডট্রি লিমিটেডের অনুকূলে প্রদান করা হয়েছে যার বিনিময়ে কোন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় নাই। শুধু তাই নয়, ভেন্ডরের হিসাব হতে পরিচালনা হিসেবে অর্থ স্থানান্তর করা, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও কার্যাদেশ ছাড়াই ভেন্ডরের অনুকূলে অর্থ ছাড় করা, ভেন্ডরের অনুকূলে বিতরণকৃত প্রায় সকল অর্থই নগদ উত্তোলন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই চিঠিতে উঠে এসেছে গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এই তিন মাসে ২১ কোটি ২৯ লক্ষ ৯১০০০ টাকা খরচ করেছে যার মধ্যে টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি টাকার উপরে। পুরোাটাই একটা ভুয়া এবং বানোয়াট খরচ দেখিয়ে টাকাটা আত্মসাৎ করে নিয়েছে জনাব আবু জাফর, জনাব নওশের আলী এবং জনাব আবুল হাশেম মাইন্ডট্রি লিমিটেডের মাধ্যমে। এত বড় জালিয়াতি মনে হয় ব্যাংক ইন্ডাস্ট্রি আর হয়নি।

যে কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে টাকা বেরিয়েছে তারা হলো মাইন্ডট্রি লিমিটেড, নিভানা ডেভলপারস, কালার ওয়েব এনহ্যান্স কনস্ট্রাকশন লিমিটে্ এমএস ইনোভেশন এবং ভারটেক্স ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই চিঠি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, মোহাম্মদ আবু জাফরের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ অপচয় করেছে, যা মানি লন্ডারিংয়ের সন্দেহ জাগিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে যে, এসব লেনদেন সাসপিশিয়াস ট্রানজেকশন রিপোর্ট (এসটিআর) হিসেবে রিপোর্ট করা হয়নি, যা অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইনের লঙ্ঘন। এছাড়া, ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট আইএফআরএস মান অনুসরণ করেনি, যা আরও দুর্নীতির প্রমাণ।
এই চিঠি মোহাম্মদ আবু জাফরের অপরাধকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। তিনি স্বার্থের সংঘাত (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) এবং দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ লুট করেছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি সংগঠিত দুর্নীতির চক্র, যেখানে বিভিন্ন কোম্পানিকে ব্যবহার করে অর্থ পাচার করা হয়েছে তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রিমিয়ার ব্যাংককে এ বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু চিঠির তথ্য থেকে মোহাম্মদ আবু জাফরের অপরাধ সুস্পষ্ট।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে অবিলম্বে তদন্ত করার দাবি উঠেছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের গ্রাহকরা এখন উদ্বিগ্ন যে, এমন দুর্নীতির কারণে তাদের আমানতের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে। এই ঘটনা ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার তুলে ধরেছে

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর