কক্সবাজারের উখিয়ায় কারেন্টযুক্ত জালে প্রাণ গেল হাতির

সময়: 10:58 am - November 18, 2025 |

মানব কথা:কক্সবাজারের উখিয়ায় ফসল রক্ষার নামে বিছানো কারেন্টযুক্ত জালে জড়িয়ে প্রাণ গেল এক বন্য হাতির।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে পশ্চিম খয়রাতি রহমানিয়া পাড়া বিলে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত হাতি দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বন বিভাগে খবর দিলে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান, দুছড়ি বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক রনি ও বন বিভাগের অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত তদন্ত শুরু করেন।

পাহাড়ি বনভূমির সীমান্ত থেকে লোকালয়ের দিকে হাতির চলাচল বাড়ছে, আর সাথে বাড়ছে ক্ষোভ, আতঙ্ক আর ক্ষতির তালিকা। কৃষকদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে নেমে আসা হাতির পাল ভেঙে দিচ্ছে কলাগাছ, নষ্ট করছে পাকা ধান, কখনো আবার গুড়িয়ে দিচ্ছে টিনের ঘর। এসব ঠেকাতে কেউ কেউ বেছে নিচ্ছেন ঝুঁকিপূর্ণ পথ— ক্ষেতে কারেন্ট সংযুক্ত জাল পেতে রাখছেন।

দুছড়ি বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক রনি বলেন, ‘মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, কিন্তু ক্ষতির ভয়ে অনেকেই শোনেন না। হাতি লোকালয়ে ঢুকে ফসল নষ্ট করলে কৃষকের ক্ষতি হয় ঠিকই, কিন্তু কারেন্টজাল তো সরাসরি প্রাণঘাতী। বেশিরভাগ হাতি এসব জালের স্পৃষ্টে মারা যাচ্ছে।’

পল্লী চিকিৎসক মো: ইউনুচও স্বীকার করলেন একই বাস্তবতা। ধান, কলা, শাকসবজি— যা কিছু বাঁচিয়ে রাখতে চান কৃষকরা, তার চারদিকে জাল টেনে দেন আর তাতে সংযোগ দেন বৈদ্যুতিক লাইন। সে ফাঁদেই আটকা পড়ে মরছে হাতি।

পরিবেশবিদদের মতে, সমস্যার গোড়ায় আছে বনভূমির সংকোচন আর হাতির বিচরণপথ দখল। ফলাফল— ভয় আর ক্ষোভে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে মানুষ, আর প্রাণ হারায় বন্য প্রাণী। তারা বলছেন, কারেন্টযুক্ত জাল শুধু হাতির অপমৃত্যুই ঘটায় না, ধ্বংস করে জীববৈচিত্র্য।

এদিকে বন বিভাগ মৃত হাতিটির ময়নাতদন্ত, সংরক্ষণ ও পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একই সাথে স্থানীয়দের নিরাপদ বিকল্প পদ্ধতিতে ফসল রক্ষার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়— হাতি-মানুষের এ সংঘাত কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া আদৌ সমাধান সম্ভব কিনা!

উখিয়ার পাহাড়ি জনপদ আবারো মনে করিয়ে দিল, সহাবস্থান ভেঙে গেলে হারিয়ে যায় জীবন— কখনো মানুষের, কখনো বন্য প্রাণীর।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর