কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ

মানব কথা: সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানির সময় আদালতের এজলাসে কান্নায় ভেঙে পড়েন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরে নারী পুলিশের সহযোগিতায় আনা হয়।
প্রথমে তাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেলেও আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথা বলার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের সঙ্গে ছিলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা তানভীর হাসান সৈকত, যিনি তুরিনকে সান্ত্বনা দেন।
পরে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে উত্তরা পশ্চিম থানার দুটি মামলায় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানি হয়। এরপর আসে তুরিন আফরোজের প্রসঙ্গ।
তার আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম অভিযোগ করে বলেন, “তুরিন আফরোজকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি নিজের বক্তব্য রাখতে চান।”
বিচারকের অনুমতি পেয়ে তুরিন বলেন, “আমি সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার পায়ে যে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তার বিচার চাই। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পদে ছিলাম না, বরাবরই পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি। এখন আমি অসুস্থ, হাঁটতেও পারছি না। ন্যায়বিচারের আকুল আবেদন জানাই।”
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী পাল্টা বলেন, “এসব বক্তব্য মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনা ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আদালতে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে।”
তুরিন তখন নিজের পায়ের নির্যাতনের চিহ্ন বিচারককে দেখান। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
শুনানি শেষে পুলিশের পাহারায় তাকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন এক ছাত্রনেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে ১২ এপ্রিল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর মাঝে ২১ এপ্রিল মিরপুরের একটি হত্যা মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, গ্রেপ্তারের সময় তার ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়, যেখানে টেলিগ্রাম অ্যাপে ‘চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধু’, ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’, ‘বঙ্গবন্ধু রিজার্ভ ফোর্স’সহ একাধিক গ্রুপে তুরিন সদস্য ও অ্যাডমিন ছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে সহিংসতা ও সন্ত্রাসে উসকানি দিয়েছেন।
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুরিন প্রসিকিউটর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম আযমসহ একাধিক উচ্চ পর্যায়ের মামলায় তিনি ছিলেন প্রধান আইনজীবীদের একজন।
তবে ২০১৯ সালে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত এনএসআই ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগে তাকে ট্রাইব্যুনেট থেকে অপসারণ করে সরকার।
তুরিন আফরোজ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থী ছিলেন। গত বছরের সরকার পরিবর্তনের পর ক্ষমতাসীন ঘনিষ্ঠ হিসেবে তাকেও বেশ কয়েকটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।