বিএনপি ও আত্ম সমালোচনা

মাহমুদ সোহেল গত ১৬ বছর বিএনপি’র জন্য বুক ভরা আবেগ ছিল কোটি কোটি মানুষের। দলটির জন্য মন ভরে দোয়া করেছে আপামর জনতা। কিন্তু ৫ আগস্ট এর পর দলের নেতাকর্মীর কিছু কর্মকাণ্ড তৃণমূলের মানুষকে ব্যথিত করেছেন। বিএনপি নেতাদের এই বিষয়টি আত্ম সমালোচনায় আসা উচিত ছিল। শীর্ষ নেতারা কেন যেন এটি বুঝতে চাইছে না। এতে করে দিন দিন তৃণমূলে শক্তি হারাচ্ছে শহীদ জিয়ার দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতারা ভুলে যাচ্ছেন, দেশের মানুষের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে। তাছাড়া ফেসবুক ইউটিউব এর কারনে রাজনীতির ভেতরের খবরও জেনে যাচ্ছে গ্রামের চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়া মানুষটিও।
রাষ্ট্র সংস্কারের কোন বিষয়টি কোন দল কতটুকু বিরোধিতা করছে সে সবকিছুর খুঁটিনাটি পর্যন্ত খোঁজ রাখছে সাধারণ ভোটাররা। হাসিনা পালানোর পর দেশের মানুষের মাঝে প্রত্যাশা বেড়েছে বহু গুনে। ভোটাররা রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিবাচক পরিবর্তন চাইছে। আগের গতানুগতিক চাঁদাবাজি আর দখলদারিত্বের রাজনীতির অবসান চাইছে দেশের মোটা অংকের মানুষ।
রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, তাদের বাচন ভঙ্গি সবকিছুই সাধারণ মানুষ গভীরভাবে নজরে রাখছে। তাই ভোটারদের আগের মত বোকা বানানো যাবে না। বিএনপি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। কিন্তু কেন বিএনপি জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে তা নিয়ে নেতাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। জনগণের পালস বুঝতে হবে। সাধারণ মানুষের মনের কথা, মনের ভাষা বুঝতে ভুল করলে আগামীতে ক্ষমতায় আসা বিএনপি’র জন্য দিবা স্বপ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য হলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে শতভাগ ওউন করা উচিত ছিল বিএনপি’র। তা না করে উল্টো জুলাই বিপ্লবীদের সাথে দিনকে দিন বিভেদের দেয়াল রচনা করে চলেছেন দলের সিনিয়র নেতারা। কখনো কখনো দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যও দিচ্ছেন।
এক ইশরাক বিএনপি’র অনেক বড় ক্ষতি করেছে। নগর ভবন দখল করার বুদ্ধি তাকে কে দিয়েছে? দলের সিনিয়র নেতাদের তা খুঁজে বের করা উচিত। ওই পরামর্শকরাই বিএনপি’র সবচেয়ে বড় শত্রু। ইশরাকের একটা বর্ণিল ক্যারিয়ার তৈরি হয়েছিল। নিজ হাতে নিজের ক্যারিয়ার শেষ করেছে সে, তার বাবার মান সম্মান ডুবিয়েছে। তার ফ্যাসিবাদী আচরণ বিএনপিকে বিতর্কিত করেছে। কিন্তু অবাক লাগে দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ইশরাক ইস্যুতে কোন কথা বলছে না কেউ। ইশরাকের আচরণের জন্য পুরো বিএনপিকে দায়ী করছে দেশের মানুষ। অথচ দলের শীর্ষ নেতারা এই ইস্যুতে নির্বিকার।
অন্যদিকে জামায়াতের কোন নেতা কর্মী অপরাধ করলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেছে দলটি। সাধারণ মানুষের মনোভাবকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে তারা। ৭১ নিয়ে নানা বিতর্কে থাকা দলটি ভালো কাজ দিয়ে ভোটারদের কাছে ডাকছে কৌশলে। অথচ ভালোবেসে ভোটারদের কাছে টানার ইস্যুতে ঘুমিয়ে আছে বিএনপি।
তারা ভুলে গেছেন ৫ আগস্ট এর আগের রাজনীতি বাংলাদেশে আর চলবে না। নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে টেস্ট অফ ভ্যারিয়েশন এসেছে। গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের কাছে এখনো বিএনপি নেতারা যাচ্ছেন না। একটি দল এতোদিন ধরে রাজনীতি করছে অথচ এই ধরনের ইমোশনকে দলের পক্ষে কাজে লাগাতে পারছে না। যেটা শুরু থেকেই কাজে লাগিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আমার মনে হয় ওভার কনফিডেন্সে ভুগছে বিএনপি। অতি অহংকারী হতে হয়ে উঠেছেন দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ। লাগামহীন বক্তব্য দিচ্ছেন অনেকে। কিন্তু অবাক লাগছে এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোন সংশোধনী আনা হচ্ছে না। এতে করে দিন দিন ভোট কমছে বিএনপি’র।
এভাবে ভুল করতে থাকলে আগামী সংসদ নির্বাচনে কাঙ্খিত ফলাফল নাও পেতে পারে দলটি। ভোটারদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ব্যালট যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।