সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ দুই-তিনজন থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব দিলো বিএনপি

সময়: 10:25 am - April 22, 2025 |

মানব কথা: মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে সংলাপে বিএনপি এ প্রস্তাব করে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ।

ভবিষ্যতে যাতে বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না হতে পারে সেজন্য আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের দুই-তিনজনের মধ্য থেকে নিয়োগের পক্ষে বিএনপি।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে সংলাপে বিএনপি এ প্রস্তাব করে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ। বৈঠকের দুপুরের বিরতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করেছে বিচার ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। বিষয়টিতে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ওনাদের প্রস্তাব ছিল আপিল বিভাগের সিনিয়র-মোস্ট যেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হন। আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে রাষ্ট্রের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি আগে দেখা গেছে। সর্বক্ষেত্রে আমরা যদি নির্দিষ্ট করে দিই, কোনো বিকল্প না থাকে, ভবিষ্যতে যেহেতু আমরা বিচারবিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে চাই, সেক্ষেত্রে আগের মতো কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি হন, এটা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না।’

তিনি বলেন, ‘এখানে একটা অন্তত বিকল্প থাকা উচিত, আপিল বিভাগের সিনিয়র-মোস্ট বিচারপতিদের মধ্যে কমছে-কম দুই-তিনজন এ অপশনে থাকে। সেই জায়গাটা এখনো গৃহীত হয়নি। এখনো আলোচনা চলছে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নেসেসিটি মেকস ল। আমাদের কাছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। ডকট্রিন অব নেসেসিটি বিবেচনা রেখেই কিছু অপশন রাখা সুবিধা। না হলে রাষ্ট্র এমন কোনো ব্যক্তির হাতে পড়ে যাবে, যা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে পরিচালিত। কিন্তু ওনারা বলেছেন কালেকটিভলি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা কর্তৃক পরিচালিত। তাতে এখানে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব থাকে না। আমরা বলেছি প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব থাকা উচিত।’

একজন সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের এমন প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি। দলটির প্রস্তাবে বলা আছে, দুইবারের পরে বিরতি দিয়ে আবারো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ আছে। তবে রোববারে মূলতবি হওয়া বৈঠকের আলোচনায় একজন সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এমন কথা হয়। বিষয়টি বিএনপিও ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিকল্প প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করেন। আর তারা ফরমালি প্রস্তাবটি আমাদের দেয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যাতে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা পদে না থাকেন সেটি নিয়ে আলাপ হয়েছে। এখানে যে মেজরিটি পার্টি সংসদে সংসদীয় দল হয়, সেই পার্টি সিদ্ধান্ত নেয়, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটা জরুরি নয় যে, পার্টির প্রধান প্রধানমন্ত্রী হবেন। এমন উদাহরণ আছে। কিন্তু হওয়ার অপশন রাখা উচিত। আর প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন, তিনিই সংসদ নেতা হবেন। এটা ট্রেডিশন। কোনো কোনো দেশ সংসদ নেতাকে আলাদা করেছে এমন নজির আছে। কিন্তু এখানে সংসদ নেতার কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। এখানে সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী অনেকটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা প্রধানমন্ত্রীর মতো আলাদা পোস্ট নয়। কয়েকটা জায়গায় শুধু সংসদ নেতার উল্লেখ আছে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ১৪ জন হবে, এর সাথে একমত। উপদেষ্টামন্ডলীর কার্যাবলীর রুটিনওয়ার্কের ক্ষেত্রে একমত। প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য থেকে একজনকে মনোনীত করা হবে, সে বিষয়ে একমত। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একমত। স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ করা হবে না, এ ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ একমত।’

তিনি আরো বলেন, ‘শৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমরা মোটামুটি একমত। তবে এটা আরো বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার। কারণ শৃখলাবাহিনী বলতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন বিভাগসহ পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আছে। সুতরাং ঢালাওভাবে শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে একটি প্রোভেশন রাখি হঠাৎ করে, তাহলে ইনব্যালেন্স হয়ে যেতে পারে। সেজন্য এটা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। একটি জিনিসে ঐক্যমতে আসা যায় কিন্তু যেটা রাষ্ট্রের বিষয়, সংবিধধানের বিষয়, রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয় সেটা গভীরভাবে চিন্তা করে সংবিধানে আনতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আইনসভার ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, আমরা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে একমত। ওনারা এটার নাম রেখেছেন উচ্চ কক্ষের জন্য সিনেট, নিম্ন কক্ষের নাম জাতীয় সংসদ। এটাতে আমরা একমত। নিম্ন কক্ষের ৪০০ আসেন মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এটা নিয়ে আমরা একমত, তবে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আমাদের মধ্যে ভিন্নমত আছে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা আমরা বলেছি। যেখানে রাষ্ট্রপতির হাতে কি কি ক্ষমতা অর্পণ করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা না করে রাষ্ট্রপতি কি কি করতে পারবেন সেটা বিস্তারিত থাকবে। এটা এই মুহূর্তে আমরা উন্মোচন করছি না।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর