ঈদের আগে মসলার বাজারে স্বস্তি

মানব কথা: ঈদুল আজহার আগে এবার ভিন্ন এক চিত্র মসলার বাজারে। প্রতিবছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জিরা, ধনে, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলার দাম বাড়লেও এবার উল্টো দাম কমেছে অনেকটা। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। তবে এই মূল্যহ্রাসে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি মসলার বাজার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে পাওয়া গেল ভিন্ন এক বাস্তবতা। গত বছরের তুলনায় এবারের একই সময়ে জিরার দাম কেজিতে প্রায় ১৫০ টাকা কম। যেখানে গত বছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জিরা বিক্রি হয়েছিল ৭৫০ টাকায়, এবার তা নেমে এসেছে ৬০০ টাকায়। একই ধারা দেখা গেছে ধনে, লবঙ্গ, তেজপাতা, মরিচ ও হলুদের মতো অন্যান্য গরম মসলাতেও।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খুচরা পণ্য তালিকা অনুযায়ী, এবছর ঈদের আগে বেশিরভাগ মসলার দাম গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম। তবে এর ব্যতিক্রম এলাচ, যার মূল্য বেড়েছে আগের তুলনায়।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমার কারণ চোরাই পথে দেশে আসা পণ্য। এতে বৈধভাবে আমদানি করা মসলার বিক্রি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, “আমরা পুরোপুরি শুল্ক দিয়ে বৈধ পথে পণ্য এনেছি। কিন্তু এখন বিক্রি না হওয়ায় অনেক মসলা লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”
পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে বাজারে সিন্ডিকেট দুর্বল হওয়া—এমনটাই জানালেন খুচরা বিক্রেতারা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কথা হয় একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানান, এবার কোনো সিন্ডিকেট না থাকায় মসলার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, “এবার বাজারে সিন্ডিকেট নেই। তাই পেঁয়াজ-রসুন থেকে শুরু করে অন্যান্য মসলার দাম আগের তুলনায় অনেকটাই কম।”
দেশের প্রধান আমদানিকেন্দ্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারেও দেখা গেছে একই প্রবণতা। পেঁয়াজ, রসুন, আদা—সবকিছুই আগের বছরের তুলনায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, “এখন পণ্য আমদানিতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। যার ফলে সরবরাহ বেশি হচ্ছে, দামও কমে আসছে।”
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী— পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫–৫২ টাকায়, খুচরায় ৫৫–৬৫ টাকায়। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৯৫–১০৫ টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় অন্তত ৩০ টাকা কম। আদার দাম কমেছে প্রায় ৭০ টাকা।
সবকিছু মিলিয়ে এবারের ঈদ বাজারে মসলার মূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সবাই। একজন ক্রেতা বলেন, “প্রতিবার ঈদের আগে মসলার দাম হু হু করে বেড়ে যায়। এবার তুলনামূলকভাবে দাম অনেক কম। এতে আমরা অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।”
তবে এই পরিস্থিতি যেন এককালীন না হয়, এটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। তারা চান, ভবিষ্যতেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার যেন থেকে যায় নিয়ন্ত্রণে।
“আগামী বছর যে সরকারই থাকুক, ঈদের সময় বাজার যেন থাকে মানুষের নাগালে”—এমনটাই বলছেন সচেতন নাগরিকেরা।