দুই সপ্তাহে ৮ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ
মানব কথা: মিয়ানমারে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে আবারো আসতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। সীমান্ত অতিক্রম করে এক দিনেই বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে কমপক্ষে পাঁচ শ’ রোহিঙ্গা। এর আগে গত শুক্রবার কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে এসেছে আরো দুই শতাধিক। গত দুই সপ্তাহে উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে এসেছে কমপক্ষে আট হাজার রোহিঙ্গা। এদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন আগে থেকে ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা ফয়েক বলেন, ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে এপারে আসতে।
কাকে দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি প্রথমে তাদের আটক করে নাফ নদীর মাঝখানে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে নৌকায় থাকা লোকদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে এপারে আনা হয়।
এমন করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। তবে বিষয়টির সত্যতা যাছাই করা সম্ভব হয়নি।
গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, রাখাইনের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে (পশ্চিমে) চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী পেরোলেই বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলা। রাতের অন্ধকারে মংডু টাউনশিপের সুদাপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া, ও নুরুল্লাপাড়া গ্রাম থেকে রোহিঙ্গারা নৌকা নিয়ে নাফ নদ অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। বেশিরভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলী বরইতলী, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেশখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছরা, বাহারছড়া সীমান্ত এবং উপকূল দিয়ে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদ থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে আশ্রয় শিবিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা-ধর্ষণের জেরে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ঢুকে পড়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে থেকেই সেখানে ছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এদের আশ্রয় দিতে সব মিলিয়ে ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপন করতে হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সুচি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও করে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ব্যর্থ হয় আলোচনা।
উখিয়া-টেকনাফে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এরপর থেকে গত সাত বছরে ক্রমাগত বিপর্যয় ঘটেছে উখিয়া-টেকনাফের পরিবেশ-প্রতিবেশের। সামাজিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা ক্রমাগত বেড়েছে। বর্জ্য অব্যবস্থাপনা, পাহাড় কাটা ও বন উজাড়ের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনে সৃষ্টি করেছে নতুন চ্যালেঞ্জ।