১৬ বছরে সুবিধা বঞ্চিত তাঁতীদের ভাগ্য সেই তিমিরেই রয়েছে

সময়: 1:48 pm - August 12, 2025 |

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের তাঁতীদের জন্ম যেন আজন্ম পাপ। অতীতের সরকারগুলোও তাঁতীদের ওপর সুনজর দেয়নি। বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের জাঁতাকলে এশিল্পটি ধংসের পথে যেতে থাকে, বন্ধ হয়ে যায় ৬০ ভাগ তাঁত, বেকার হয়ে পড়ে ১৫ লাখ তাঁতী ও তাঁত শ্রমিক। ২৪ সালের পটপরিবর্তনের পর তাঁতীরা আশায় বুক বেধেঁছিল যে, এবার বুঝি তাদের ভাগ্যে খুলবে। কিন্তু ইউনূস সরকারে গত এক বছরে তাঁতীদের ভাগ্য সেই আগের তিমিরেই রয়ে গেছে। বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক সহযোগিতা ও সুনজর না থাকার কারণে তাঁতশিল্প এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।
তাঁতীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে তাঁতীদের মাঝে সহজশর্তে ঋণ সুবিধা বিতরণ ও আংশিক সূল্কমূক্ত সূতা রং রাসায়নিকদ্রব্যাদি আমদানি সুবিধা বন্ধ রয়েছে। তাঁতবোর্ডে সূতা,রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমদানি সুপারিশ বন্ধ থাকায় খোলা বাজারে এর দাম এখন দ্বিগুন হয়েছে। তাঁতীরা খোলা বাজার থেকে দ্বিগুন দামে সূতা রং রাসায়নিকদ্রব্যাদি ক্রয় করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু কাপড় তৈরীতে খরচ বেশি পড়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। ফলে অনেক তাঁতী পেশা ত্যাগ করছেন।

তাঁতীরা জানান, এর আগে তাঁতীরা ন্যায্যমূল্যে আংশিক সূল্কমূক্ত সূতা রং রাসায়নিকদ্রব্যাদি পেতো। বর্তমানে তা বন্ধ আছে। তাঁতবোর্ডের মাধ্যমে ঋণ সুবিধা বিতরণ ও আংশিক সূল্কমূক্ত সূতা রং রাসায়নিকদ্রব্যাদি আমদানীর সুযোগ দেয়া হলে তাঁতশিল্পের উন্নতি ও প্রসার ঘটবে এবং সেখানে ব্যাপক কর্মসংস্হান সৃষ্টি হবে। তাঁতশিল্পকে ধংশের হাত থেকে বাঁচাতে এবং বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য সূতা,রং ও রাসায়নিকদ্রব্য (আংশিক শুল্কমুক্ত) আমদানি করা একান্তই প্রয়োজন।
তাঁতীতের দাবি, বাংলাদেশ তাঁতবোর্ডের অধিনে প্রাথমিক তাঁতী সমিতি রয়েছে ১৩৬০টি, জাতীয় তাঁতী সমিতির মাধ্যমে এই প্রাথমিক তাঁতী সমিতিগুলোকে প্রচলিত আংশিক শুল্কমূক্ত সূতা,রং ও রাসায়নিকদ্রব্য আমদানি করার সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। এছাড়াও এই ১৩৬০টি সমিতির সকল সদস্যকে তাদের অচল তাঁতগুলো সচল করতে ও যাদের তাঁত আছে পুঁজি নাই তাদের মাঝে ঋণ বিতরন করতে হবে। শেখ হাসিনা পলায়নের পর থেকে তাঁতীদেরকে কোন প্রকার ঋণ সুবিধা দেয়া হয়নি।
গত ২/৩ মাস আগে দুইটি প্রাথমিক তাঁতী সমিতিকে (প্রায়২০কোটি টাকার) সূতা,রং ও রাসায়নিকদ্রব্য আমদানির সুপারিশ দেয়া হলেও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতী সমিতিটির আমদানি সুপারিশ স্হগিত করা হয় ১৬ জুলাই তারিখে তাঁতবোর্ডের বোর্ড মিটিং থেকে। স্হগিতের কারন হচ্ছে, এই সমিতির আওতায় আরোও ৪০০জন তাঁতীর প্রায় ২ হাজার তাঁত রয়েছে সেগুলোকে সমিতির সদস্যভূক্ত করা হয়নি। কিন্তু সুপারিশ স্হগিত হওয়া সত্বেও তাঁতবোর্ডের ডিজিএম এর চক্র চাল খেলায় সিরাজগঞ্জের একটি ব্যাংক শাখায় অবৈধ ভাবে এলসি খোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে তাঁতবোর্ডের চেয়ারম্যান আবু আহমদ সিদ্দিকী টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন,এলসি খোলার বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে। আমদানির জন্য এলসি খুলতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এলসি না খোলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে, আমদানি রপ্তানী নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল কাষ্টম হাউস কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ তাঁতবোর্ডের ডিজিএম রতন চন্দ্র সাহা এ প্রতিবেদককে বলেন, সূতা,রং ও রাসায়নিকদ্রব্য আমদানির সুপারিশ দেয়া হলেও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতী সমিতিটির আমদানি সুপারিশ স্থগিত করা হয়। তার পরেও তারা কিভাবে এলসি খুললো এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না। এর উত্তর আমাদের জানা নেই। স্থগিতাদেশ থাকা শত্বেও যারা এলসি খুলেছে এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে।
সূতা রং রাসায়নিকদ্রব্যাদি আমদানি বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রতন চন্দ্র সাহা বলেন, সূতা রং রাসায়নিকদ্রব্যাদি আমদানি আপাতত বন্ধ রয়েছে। এটা সমাধানের জন্য আমরা কাজ করছি। আমদানি সুপারিশের কার্যক্রম শুরু হলে তাতীদের সমস্যা সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। তাতীদের জন্যই তো তাঁত বোর্ডের সৃষ্টি হয়েছে।

জাতীয় তাঁতী সমিতির সেক্রেটারী ফজলুল হক জানান,পোষক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত সুপারিশ স্হগিত করার পর কোন অযুহাতেই এলসি খুলতে পারেনা। তাঁত বোর্ডকে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংকে অব্যশই পত্র প্রেরন করতে হবে। এ ছাড়া কাস্টমস হতে মাল খালাস হবেনা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার একজন বিশিষ্ট তাঁত ব্যবসায়ী হাফিজ উদ্দিনের শতাধিক তাঁতে শাড়ী লুংগী সহ বিভিন্ন ধরনের কপড় তৈরী করেন। তার উৎপাদিত কাপড় দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ব্যবসায়ীরা শাহজাদপুর বিশাল কাপড়ের হাটে এসে কিনে নিয়ে যায়। তার উৎপাদিত কাপড় বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে। তিনি বলেন, যেহেতু দেশে-বিদেশে তাতীদের উৎপাদিত কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমিতিভূক্ত তাঁতীরা কাপড় উৎপাদনের ক্ষেএে আর্থিক ঋণ সহযোগিতা আর আংশিক সুল্কমূক্ত সূতা,রং রাসায়নিকদ্রব্য আমদানি সুবিধা পেলে কাপড় উৎপাদন ও বিক্রি করে তাঁতব্যবসায় তাতীরা লাভবান হতো,সেই সাথে লাখ লাখ লোকেরও কর্মসংস্হান হতো। এবিষয়ে এখন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে তাঁতশিল্পের উন্নোয়নে সরকারের সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর