শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুযায়ী তুঘলকি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, নেপথ্যে হাজার কোটি টাকার অধিগ্রহন বানিজ্য

সময়: 2:20 pm - August 24, 2025 |

মানব কথা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে জেনেভা ক্যাম্প সরিয়ে নিতে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনায় কেরানীগঞ্জের আহাদীপুর মৌজায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কার্যবিবরণী অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে মোট ১১৬টি বিহারী ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে সাড়ে ১৪ একর জমির ওপর প্রায় ৮ হাজার ৮শ’ পরিবার বসবাস করছে। এসব পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৩৫ হাজার। প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৪ বর্গমিটার জমি। তাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে এবং জেনেভা ক্যাম্পের জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এই প্রকল্প নেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটিকে কতই না মানব হিতৈষী মনে হলেও এর নেপথ্য রয়েছে এক সুগভীর চক্রান্ত। ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গণভবনের নিরাপত্তার জন্য বিহারী তথা উর্দু ভাষীদের অনিরাপদ মনে করতেন বিধায় এই প্রকল্প নেয়া হয়। এধরনের ফরমায়েসী প্রকল্পের সমীক্ষা ও সম্ভাব্যতার প্রতিবেদন এর রেজাল্ট আগেই পজিটিভ ঠিক করা থাকে। তাই এর অর্থনৈতিক; আর্থিক ও সামাজিন সমীক্ষা অবশ্যই প্রশ্ন বিদ্ধ।

প্রকল্পের পটভূমিঃ গত২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে ৬ হাজার ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনায় বসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি)। ৩ অক্টোবর ওই সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ততকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার বলেন, কেন এত জমির প্রস্তাব করা হয়েছে সে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিকল্পনা কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তা মেনেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করা হবে। সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১০ মে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ‘স্বল্প আয়ের মানুষের উন্নত জীবন ব্যবস্থা’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার সময় সিদ্ধান্ত হয় মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের জন্য আলাদা একটি প্রকল্প নেয়া হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৬৪ একর জমির ওপর ১৪ তলা বিশিষ্ট ৫৮টি আবাসিক ভবনে ৬ হাজার ৩২টি ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। ৮শ’ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্ল্যাটসমৃদ্ধ এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। পরের বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সেই প্রস্তাবের ওপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পরে পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে আসে ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। তাতে দেখা যায়, সভার সিদ্ধান্ত মেনে ৬৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ছোট আকারে ৪৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়। ওই বছরের ১ নবেম্বর পুনর্গঠিত ডিপিপির ওপর দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই পর্যায়ে পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ মানা হয়নি, জানায় সূত্র।

শাহীন চেয়ারম্যান এর ইচ্ছায় অধিগ্রহন ব্যয় বৃদ্ধিঃ এই পর্যায়ে স্থান পরিবর্তন করে আরও বড় পরিসরে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ এবং প্রকল্প ব্যয় কয়েকগুণ বাড়িয়ে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠানো হয়। অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয় পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, বসিলায় প্রস্তাবিত স্থানে একটি প্রাইভেট ডেভেলপার কোম্পানি ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। যে কারণে কেরানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান বসিলার পরিবর্তে তার এলাকায় প্রকল্পটি নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ৭৬০টি ফ্ল্যাট ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ১০০ একর জমির প্রয়োজন হবে। অবশিষ্ট জমিতে পর্যায়ক্রমে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গার বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় একটি টাউনশিপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কারণে অতিরিক্ত জমির প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, একনেক সভার সিদ্ধান্ত ছিল মোহাম্মদপুরের বিহারীদের পুনর্বাসন। সারাদেশের বিহারীদের একত্রিত করার পরিকল্পনা ছিল না। কেরানীগঞ্জে ইতোমধ্যে মডেল টাউন প্রকল্পের আওতায় টাউনশিপ গড়ে তুলছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তাই এই প্রকল্পে নতুন টাউনশিপের প্রয়োজন নেই। আসলে কেরানীগঞ্জে জলাভূমি ও কৃষিজমি অধিগ্রহন করে সরকারের ব্যয় বাড়লেও লাভ হবে শাহীন চেয়ারম্যান গংদের। এই শাহীন চেয়ারম্যান চিহ্নিত ভূমিদস্যু এবং আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক জ্বালানীমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ডান হাত। তারা আগেই অধিগ্রহন এর আওতায় আসবে এমন জমি গুলো জোর জবরদস্তী করে উচ্চমূল্য দেখিয়ে কিনে নিয়েছেন। যা এই জালিয়াত চক্র প্রচলিত মৌজা মূল্যের চেয়ে অনেক উচ্চদরে দলিল দেখায়। কিন্তু বাস্তবে জমির প্রকৃত মালিক কে সেই মূল্য না দিয়ে যোর জবরদস্তি করে মালিকানা লিখে নেন। অথচ সরকারকে সেই দলিল মূল্যের তিনগুন মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

প্রকল্পের সম্ভাব্য স্থানের আশে পাশে জমি কিনে ফেলেছে জাগৃকের অশুভ চক্রঃ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের একটি অশুভ চক্র ভুমিদস্যু; শাহীন চেয়ারম্যান, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের যোগশাজসে প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানের আশে পাশে জমি কিনে আবাসন প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। সরকারি অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তাদের কালো টাকায় কেনা অবৈধ আবাসন প্রকল্পেরও মূল্য বাড়বে। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে পট পরিবর্তন হলেও এসব প্রকল্প থেমে থাকেনি। আওয়ামীলীগের এসব আবাসন প্রকল্পকে জিইয়ে রেখেছেন এক ক্ষমতাধর আমলা। শুনেছি ওই ক্ষমতাধর আমলার শ্যালক ও ভাগিনার নামে শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে , মূলত তারাই পোস্টার বয় হিসাবে এসব আবাসন ব্যবসা চালাচ্ছে।

পরিবেশ বিপর্যয় ও আর্থ-সামাজিক ঝুকিঃ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কেরানীগঞ্জে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহন করা হলে কৃষি জমি হারিয়ে অনেক কৃষক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিনত হবে। বহুলোক বাস্তুহারা হবে, পেশা হারিয়ে ছিন্নমূল হয়ে পড়বে। প্রাকৃতিক জলাধার ধ্বংস হয়ে মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটবে। তাছাড়া মুহাম্মদপুরে দীর্ঘদিন থাকা বিহারী জনগোষ্ঠী তাদের জীবিকা হারাবে। তারা যা হাতের কাজ জানে/ যে দোকান / ওয়ার্ক শপে কাজ করে কিংবা খাবের দোকানে কাজ করে তার কোনটিই কেরানী গঞ্জে নেই। কেরানীগঞ্জ থেকে শাটল সার্ভিসের যে কথা বলা হয়েছে তার জ্বালনী খরচ যোগাবে কি গৌরি সেন? নিত্যকার অপ্রযোজনীয় যাতায়াতে যে সময় ও জীবনী শক্তির অপচয় হবে তার সুযোগব্যয় অথবা আর্থিক মূল্য কী হিসাব করা হয়েছে? ১৯৪৭ সালে রায়টের সময় হতে ১৯৬৫ এর পাক-ভারত যুদ্ধের অব্যবহিত পর পর্যন্ত ভারত থেকে বিতাড়িত মুসলিম মুহাজিরদের জন্য তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকার ঢাকার মিরপুর, মুহাম্মদপুরে প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমি অধিগ্রহন করে। এই মুহাজিরদের পুনর্বাসনে হাউজিং উইং গঠন করা হয় এবং ১৯৭১ সালে হাউজিং এন্ড সেটেলমেন্ট ডিরেক্টোরেট গঠিত হয়। ভারতে ধর্মীয় সহিংসতার কারনে বাস্তুচ্যত এই গোষ্ঠির লোকজন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করায় ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ নামে পরিচিতি পায়। কেবল মাত্র ধর্মীয় পরিচয়ে বাস্তুচ্যুত উর্দুভাষী এই মানব সম্প্রদায় নব সৃষ্ট বাংলাদেশে নতুন করে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক ভাবেই মোহাম্মদপুরের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ভারত বিদ্বেষ বিরাজমান ছিল, যা বাংলাদেশে ভারতের তাবেদার আওয়ামীলীগের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়ায়। এই অঞ্চলের লোকজন সবসময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি এন পি) এর ভোট ব্যাংক হিসাবে বিবেচিত হতো। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ভারতীয় প্রেসকিপশনে এখানকার জনমিতি পরিবর্তনে পরিকপ্লনা নিয়ে মাঠে নামে। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যেভাবে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে , তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আওয়ামী নাম ধারী ভারতীয় দালালদের পুনর্বাসন করে গেছে, এখনও যাচ্ছে। মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া ধানমন্ডির মতো দামী জায়গায় প্লট;ফ্ল্যাট পেয়েছেন ফ্যাসিবাদ কায়েমের অন্যতম দোসর সচিব থেকে শুরু করে নানা স্তরের আমলারা; পুলিশ; জুডিশিয়ারি; হালুয়া রুটি খাওয়া শ্যামলমিত্র, মোজা বাবু মার্কা সাংবাদিক; অরুনা বিশ্বাস-বন্যাদি-শাওনের মতো আলো আসবেই গ্রুপের বিবেকহীন সংস্কৃতি কর্মীরা। বিভিন্ন এজেন্সি ; আওয়ামী -যুবলীগ-ছাত্রলীগের গুন্ডা ; মোসাহেব পেশাজীবি ও ব্যবসায়ী যারাসারা দিন ফ্যাসিবাদের বয়ান ফেরি করে ফিরতেন তারাই এখানে জাগৃকের প্লট / ফ্ল্যাট পেয়েছেন। আর যারা পেয়েছেন এ কাজে সহযোগিতা করা জাগৃকের নিজস্ব দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাগণ।

এভাবে আওয়ামী আদর্শের সিন্ডিকেট সদস্য রা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৬ বছরে লাল মাটিয়া, মোহাম্মদপুরে প্রায় আড়াই হাজার ফ্ল্যাট নির্মান করে সেখানে দলীয় লোকদের পুনর্বাসন করেছে। গড়ে প্রতি ফ্ল্যাটে ৬ জন করে থাকলে সে খানে প্রায় ১৫ হাজার আওয়ামী দালাল কে স্থায়ী বাসিন্দা করা হয়েছে। ভোটের জনমিতি পরিবর্তনে তা যথেষ্টই ভুমিকা রাখতে পারে। কেবল ভূমি দস্যু-ঠিকাদার-আমলা-জাগৃকের অশুভচক্রকে ধনী বানাতে একবার বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে পুনরায় বাস্তুচ্যুত করা কার স্বার্থে? দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর ধর্ম ও ভাষাগত বৈষম্যের কারনে একটি জনগোষ্ঠীকে কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার, হাসিনার এই দুরভিসন্ধি মূলক এই তুঘলকি প্রকল্পটি চিরতরে বাদ দিতে হবে।

এপ্রসঙ্গে এসপিজিআরসি (SPGRC) এর প্রধান কার্যালয়ের দ্বায়িত্বশীল দের সাথে কথা বলতে ০১৮১৯-৫২০১৪৭ নম্বরে কল দিলে “ বলেন “ বিষয় টি আমারা গুরুত্বের সহিত খতিয়ে দেখতে হবে“

এ বিষয়ে রিফিউজিদের মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে মতামত জানতে ঢাকাস্থ জাতিসংঘ শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিনিধি অফিসে +৮৮০২৫৫০৫১৯৪৬-৫২ নম্বরে কল দিলে, প্রতিনিধি জানান বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দিবো।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর