দ‍্যা রোড টু লাইট

সময়: 7:18 am - September 11, 2025 |

ব‍্যারিস্টার আবু সায়েম: ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পরাজয় নিশ্চয়ই একটি বিস্ময়কর বেদনাদায়ক ঘটনা—কেবল বিএনপির জন‍্য নয়, ভিন্ন মত ও পথের অনেক শুভানুধ‍্যায়ীর জন‍্যও। যা ঘটেছে তা মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু মানতে হবে, বুঝতে হবে এবং শিখতে হবে। প্রতিপক্ষকে বকাবাদ‍্য করে, অন‍্যের ওপর দোষ চাপিয়ে, হতাশার গল্প ছড়িয়ে কিংবা বিএনপির ললাটে চিরস্থায়ী নেতিবাচক রায় লিখে দিয়ে কী ফায়দা?

মনে রাখতে হবে, ডাকসু নির্বাচন কেবলই একটি বিশ্ববিদ‍্যালয়কে ঘিরে। এটি অবশ‍্যই জাতীয় রাজনীতির চুড়ান্ত ভাগ‍্য নির্ধারক বা গতিসূচক নয়, বরং আজকের তরুণ-তরুণীদের আগামীতে রাষ্ট্রের কর্ণধার হওয়ার অন‍্যতম সোপানমাত্র। ডাকসুতে বিজয়ী-বিজিত উভয় পক্ষই বেড়ে উঠবে দেশ ও জাতির জন‍্য—এটুকুই কেবল প্রত‍্যাশিত। তার মানে এই নয় যে, আমি বলছি, জাতীয় রাজনীতিতে এর কোন প্রভাব নেই। অবশ‍্যই আছে। কিন্তু ১২ কোটি রংবেরঙের ভোটার আর ৪০ হাজার সমগোত্রীয় ভোটারের চিন্তার ফ‍্যাকাল্টি কখনো এক হতে পারে না। জাতীয় টুর্নামেন্টে বহুমাত্রিক অনুসর্গের যোগ-বিয়োগ থাকে, খেলার ধাঁচও হয় ভিন্ন। সে খেলার দৃশ‍্যমান কুশীলব জনগণ আর অদৃশ‍্য প্রভাবক রাষ্ট্র কিংবা বহিঃরাষ্ট্র । এ ত্রয়ের যে কিংবা যাদের কম্বিনেশন হয় অধিকতর শক্তিশালী, তাদের ইচ্ছেরই প্রতিফলন ঘটে জাতীয় নির্বাচনে। ফলে ডাকসুতে কারা জিতলো না জিতলো, তার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতেই আটকা পড়ে থাকার কথা।

তবে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল অবশ‍্যই আমাদের জন‍্য সতর্কবার্তা। যদি এ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ‍্যত কর্মপন্থা সাজাতে পারি আমরা, তাহলে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু এটিকে হালকা ভেবে উড়িয়ে দিলে, বিপর্যয় ধরা দিবে বলেই আমার বিশ্বাস।

দিনশেষে বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। নিরাপদ জীবন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, ন‍্যায়বিচার, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক মুক্তি—ইত‍্যকার সব চাহিদা পূরণে মানুষের সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গাও বিএনপি। আমার বিশ্বাস, জনগণ এখন তারেক রহমানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সহসাই জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি হবে তাকে ঘিরে এবং, সন্দেহ নেই, তিনি দেশে ফিরলে ঘড়ির কাঁটা ঘুরে যাবে। এটা কোন আষাঢ়ে গল্প বা ছেলেভুলানো ছড়া নয়। এটাই বাস্তবতা, যদি না আমরা নিজেরা ভুল করি বা অন‍্যের পাতা ফাঁদে পা দেই। দরকার কেবল সঠিক নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়ন।

কিন্তু কী হবে আমাদের নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মকৌশল? তা বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। জ্ঞানীগুনীরা আছেন, তারা নিশ্চয়ই কাজ করছেন। আমি আপাতত এ লেখা শেষ করব কিঞ্চিৎ পান্ডিত‍্য ঝেড়ে—শিক্ষিত, মেধাবী, চৌকষ, পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের অবিলম্বে সম্মুখভাগে নিয়ে আসতে হবে। যারা জনগণের হৃদয় ছুঁতে পারবে, বিনা দ্বিধায় সবাইকে বুকে টেনে নিবে—নেতৃত্ব তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। জনপ্রতিনিধি তারাই হবেন, যারা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়েছেন, যারা রাজনীতি করবেন বঞ্চিত মানুষের স্বজন হয়ে, যারা জেন-জিদের পালস বুঝতে পারবেন এবং যাদের ইমেজ পরিচ্ছন্ন। সর্বোপরি, নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ, সরল ও কর্মীবান্ধব।

সমাপ্ত ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আর কচলাকচলি নয়। সামনে এগোতে হবে। আমাদের চিন্তাভাবনা ও কর্মের ফোকাস হবে এখন আগামীর জাতীয় নির্বাচন। আর ভুল করা যাবে না।

বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর