মানবতাবিরোধী অপরাধ: ১৫ সেনা কর্মকর্তা ‘হেফাজতে’

মানব কথা:‘গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধে’ জড়ানোর অভিযোগে সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জনকে হেফাজতে নেয়ার কথা জানিয়েছে সেনা সদর। সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবির মধ্যে শনিবার সেনা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী মতের লোকদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় প্রসিকিউশনের দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বুধবার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৭ জন এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৩ জন আসামি।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
দুই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে চাকরিতে আছেন এবং একজন এলপিআরে গেছেন।
চাকরিরত কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জনকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেয়া হয়েছে এবং একজন পলাতক রয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরতরা হলেন- মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
শনিবার ঢাকা সেনানিবাসের মেসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান জানান, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন। আমরা মোট ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম, তাদের মধ্যে ১৫ জন এসে হেফাজতে রয়েছেন।
তিনি জানান, ৩টি মামলায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন, এলপিআরএ একজন, আর বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৫ জন।
মো. হাকিমুজ্জামান জানান, ৮ তারিখ চার্জশিট দাখিলের পর এলপিআর ও সার্ভিসে থাকা ১৬ জনকে সেনাসদরে সংযুক্ত করা হয়। তাদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে সেনাসদরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়। মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি ১৫ জন রেসপন্স করেছেন। তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তারা ফ্যামিলি থেকে ডিটাচ আছেন।
তিনি বলেন, মেজর জেনারেল কবির আত্মগোপনে গেছেন। তিনি যাতে বিদেশে চলে যেতে না পারেন, সেজন্য তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
প্রথম মামলায় র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতনের অভিযোগে ১৭ জন এবং দ্বিতীয় মামলায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) নির্যাতনের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উভয় মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যিনি জুলাইয়ের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। মামলায় আরও রয়েছেন তার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং ডিজিএফআই-এর সাবেক পাঁচ মহাপরিচালক।
এই ৩০ জনের মধ্যে ২২ জনই কর্নেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান ২৪ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ৮ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দেন। আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।