গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ১২ কারখানায় ছুটি
মানব কথা: গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছে একটি কারখানার শ্রমিকরা। সড়ক অবরোধের কারণে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। যানজটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া চাকরিতে পুনর্বহাল ও নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমিকরা। নগরীর ভোগরা চৌধুরী বাড়ি এলাকায় আন্দোলনে নামেন তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে অন্তত ১২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় নায়াগ্রা টেক্সটাইল কারখানায় সাধারণ শ্রমিকদের দুই মাসের এবং স্টাফদের তিন মাসের বকেয়া বেতন পাওনা ছিল। বেতনের দাবিতে বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। সড়ক অবরোধের কারণে মহাসড়কে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। স্থানীয় প্রশাসন শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে দীর্ঘ যানজটে বিপাকে পড়েন নারী, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে তিন ঘণ্টা পর অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা। বর্তমানে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
এদিকে, বুধবার সকালে চাকরিতে পুনর্বহাল ও নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশী শ্রমিকরা।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, গাজীপুরের বেশিরভাগ কারখানার সামনে লেখা আছে ‘শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ’। মাসের ১-৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিটি কারখানার সামনেই শত শত শ্রমিক চাকরির জন্য ভিড় করেন। শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ থাকার কথা লেখা থাকলেও গোপনে নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকরা চাকরিতে যোগদান করার পর অযথা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন, এমন অভিযোগে তারা পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছেন না। এজন্য সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভোগরা এলাকায় শতাধিক শ্রমিক জড়ো হয়ে চাকরির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনরতরা বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য কারখানার ফটকের সামনে গিয়ে আহ্বান জানান। সাড়া না দিলে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। এ অবস্থায় প্রথমে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ভোগড়া পর্যন্ত সব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। ধীরে ধীরে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর রোড এলাকার কারখানাগুলোতেও শ্রমিকদের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানা ছুটি দেওয়ার পর অনেক শ্রমিক বাসায় চলে যান। সকাল সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বেলমন্ড, টেকনো ফাইভার লিমিটেড, ইন্টারলিং, ইউরোমিক ট্যাক্স লিমিটেড, রুয়া ফ্যাশনসহ গাজীপুরে ১২টি কারখানা ছুটি দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে ১০টার পর চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন ত্যাগ করলে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার অশোক কুমার পাল বলেন, চাকরিপ্রত্যাশীরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ১০টার পর থেকে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ পুলিশ সুপার সারওয়ার আলম বলেন, বকেয়া বেতন, চাকরিসহ বিভিন্ন দাবিতে পোশাক কারখানার বেশ কিছু শ্রমিক বিক্ষোভ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ সৃষ্টি করেছেন। সকাল থেকে ১০-১২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
এদিকে, একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ছাড়া অন্য শিল্প এলাকায় কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছেন শ্রমিকরা।