৪ মাসের যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয়ে সুদান

মানব কথা: গৃহযুদ্ধের কারণে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সুদান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রতিনিয়ত দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সুদানের দারফুর অঞ্চলে আধাসামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর সর্বশেষ হামলায় অন্তত ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা “বিশ্বস্ত সূত্র” থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সংখ্যাটি নিশ্চিত করেছে।
এরইমধ্যে তৃতীয় বছরে চলমান দেশটির গৃহযুদ্ধ।
গত সপ্তাহে দারফুরের এল-ফাশের শহরের আশপাশের শরণার্থী শিবিরগুলোর ওপর ভয়াবহ স্থল ও বিমান হামলা চালায় আরএসএফ। মূল লক্ষ্য ছিল এল-ফাশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা। উল্লেখ্য, এটি দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ বড় শহর। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফ-এর মধ্যে এক দুঃসহ গৃহযুদ্ধ চলছে, যার ফলে ইতিমধ্যে কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং দেশটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ১৪৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা গেলেও, প্রকৃত সংখ্যাটি ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের যাচাই প্রক্রিয়া এখনও চলছে এবং রোববারের সহিংসতা এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত নয়।” নিহতদের মধ্যে অন্তত ৯ জন ছিলেন ত্রাণকর্মী, যাদের কাজ ছিল মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। এসব ঘটনা দারফুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলছে।
এদিকে, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) সুদানে দুই বছরের গৃহযুদ্ধের ফলে শিশুদের বিরুদ্ধে হত্যা থেকে অপহরণ পর্যন্ত বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা ১ হাজার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে সোমবার এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল বলেছে, এই ধরনের ঘটনার মধ্যে পঙ্গুত্ব এবং স্কুল ও হাসপাতালে আক্রমণও অন্তর্ভুক্ত। যা আগে কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আধা সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এবং সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতের ফলে আরো কিছু অঞ্চলে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, দুই বছরের সহিংসতা এবং বাস্তুচ্যুতি সুদানজুড়ে তছনছ করে দিয়েছে লাখ লাখ শিশুর জীবনকে। এদিকে, সুদানে নিয়েজিত আন্তর্জাতিক রেড ক্রস প্রতিনিধি দলের প্রধান জানিয়েছেন, দেশটিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ব্যাপক লঙ্ঘন হয়েছে।