জুলাইয়ের মধ্যেই ঐকমত্য সনদের আশা: আলী রীয়াজ

সময়: 9:22 am - July 2, 2025 |

মানব কথা: জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একদিকে যেমন আশাবাদ বিরাজ করছে, তেমনি রয়েছে কিছু হতাশাও। তবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি চূড়ান্ত খসড়া বা ‘সনদের জায়গা’য় পৌঁছানো সম্ভব বলে আশাবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

বুধবার (২ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সপ্তম দিনের সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় নির্বাচনী সহায়তায় জাপানের ৪.৮ মিলিয়ন ডলার অনুদান

তিনি বলেন, “আমরা কখনো অগ্রসর হই, কখনো আবার হতাশ হই। তবে আমি মনে করি, যদি আমরা সবাই মিলে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাই, তাহলে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে একটি সনদে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এটা তখন আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসের ফসল হবে।”

‘জুলাই সনদ’ কী?

জুলাই সনদ মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর একটি সম্মিলিত অঙ্গীকারনামা, যেখানে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি, নাগরিকদের প্রত্যাশা ও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে একটি ঐকমত্যের দলিল তৈরি করা হবে। এই সনদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামো কেমন হবে, তার রূপরেখাও উঠে আসবে।

তবে ইতোমধ্যে অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অভিযোগ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই সনদ’ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “যদি কোনো পক্ষ দলীয় স্বার্থে এই ঐকমত্য প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, তাহলে সরকারের উচিত ভয় না পেয়ে সাধারণ জনগণকে পাশে নিয়ে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা।”

আলী রীয়াজ: “এক বছর আগের সেই সাহসিকতা ভুলে গেলে চলবে না” আলী রীয়াজ বলেন, “এক বছর আগে আমরা সবাই দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজপথে নেমেছিলাম। সেই সময়ের সাহসিকতা ও একতাই আমাদের আজকের আলোচনার ভিত্তি তৈরি করেছে। সাফল্য এক পর্যায়ে থেমে গেলে চলবে না, বরং তা সংরক্ষণ ও বিস্তারের জন্য আমাদেরই সংস্কারমুখী পথে এগোতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গড়ার প্রয়াস চালাচ্ছি। নাগরিকের জীবন ও অধিকার যেন নিরাপদ হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম যেন অতীত হয়ে যায়—এই লক্ষ্যেই আমাদের একসাথে পথ চলা।”

এইদিনের বৈঠকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে সেগুলো হলো—

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদানের আইনি কাঠামোতে পরিবর্তন

আলী রীয়াজ বলেন, “গত কয়েকদিনে আমরা দলগত, জোটগত ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক আলাপ-আলোচনা করেছি। এসবই আমাদের আশাবাদী করছে। আমরা অনুভব করছি, আমাদের সবাইকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অগ্রসর হতে হবে।”

ঐকমত্য গঠনের প্রেক্ষাপট:

গত অক্টোবরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত হয় ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশন। এসব কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি মাসে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠিত হয়।

এই কমিশন সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন এবং নিরাপত্তা কাঠামো সংক্রান্ত ১৬৬টি সুপারিশের ভিত্তিতে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত চায়। এর মধ্যে ৩৩টি দল মতামত দেয়।

পরবর্তীতে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫টি অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রথম পর্বের সংলাপ শেষ করে ঐকমত্য কমিশন। এখন চলছে দ্বিতীয় দফা সংলাপ। কোরবানির ঈদের পর আবারো পূর্ণাঙ্গ বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর