জুনে সড়কে প্রতিদিন প্রাণ হারিয়েছে ২৩ জন, ক্ষতি প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা

মানব কথা: গত জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা মে মাসের তুলনায় ২২.৫৫ শতাংশ বেশি। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার ৪৬৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বুধবার (২ জুলাই) রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুন মাসে সারা দেশে ৬৮৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৯৬ জন নিহত ও ১ হাজার ৮৬৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১০৪ জন নারী এবং ১০৯ জন শিশু।
দুর্ঘটনার ধরন ও কারণ: দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়টি উঠে এসেছে। মোট দুর্ঘটনার ৪৪.৪১ শতাংশ এই কারণে ঘটেছে। এর পর রয়েছে মুখোমুখি সংঘর্ষ (২৪.২৩%), পথচারীকে চাপা (১৮%) এবং পেছন থেকে ধাক্কা (১১.০৩%)।
যানবাহনভিত্তিক মৃত্যুহার:
মোটরসাইকেল আরোহী: ২২৮ জন (৩২.৭৫%)
থ্রি-হুইলার (সিএনজি/অটো): ১৫১ জন (২১.৬৯%)
বাস যাত্রী: ৬৩ জন
ট্রাক/লরি: ৫৪ জন
স্থানীয় যান (নসিমন-করিমন): ৪৪ জন
প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস: ২২ জন
বাইসাইকেল/রিকশা: ১৪ জন
দুর্ঘটনার স্থান ও পরিসংখ্যান:
মহাসড়ক: ২৯৬টি (৪২.৯৬%)
আঞ্চলিক সড়ক: ২৪৩টি
শহরাঞ্চল: ৮৭টি
গ্রামীণ সড়ক: ৫৯টি
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা (২০২টি) ঘটেছে। সেখানে নিহত হয়েছেন ১৮৭ জন। রাজধানী ঢাকায় ৬২টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৪ জন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে—মাত্র একজন নিহত।
পেশাগত পরিচয়ে নিহত: নিহতদের মধ্যে রয়েছেন—৬ জন পুলিশ, একজন সেনাসদস্য, ৯ জন শিক্ষক, ৩ জন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও আইনজীবী মিলিয়ে ৩ জন এবং ৯৪ জন শিক্ষার্থী। এছাড়াও নিহতদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষ—ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, শ্রমিক, পোশাককর্মীসহ অনেকে।
সুপারিশ:
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়—
দক্ষ চালক গড়ে তোলা
বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি
কঠোর আইন প্রয়োগ
মহাসড়কে স্বল্পগতির যান নিষিদ্ধ
গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ
বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার (রেল-নৌ) উন্নয়ন
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর বাস্তবায়ন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, পেশাগত নিরাপত্তার অভাবে চালকরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। দুর্ঘটনার মূল কারণ বেপরোয়া গতি ও অদক্ষতা। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাঠামোগত সংস্কার ও জবাবদিহিতার মাধ্যমেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।