দূর্নীতির বরপুত্র রাজউক এর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক এখনও বহাল তবিয়তে

“দাগী অপরাধীর বেলায় পূর্ত মন্ত্রণালয় যেন অতি মানবিক”
নিজস্ব প্রতিবেদক: অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও ডিজাইন) উজ্জ্বল মল্লিককে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। গত ০৬ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে ৩২৯৩ স্মারকে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উজ্জ্বল মল্লিককে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। এতে করে তিনি প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে এক ধাপ নীচে দায়িত্ব পালন করবেন। রাজউকের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, তার কারণ দর্শানোর জবাব, বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন, ব্যক্তিগত শুনানী এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আদেশের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য ‘তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী’ পদে নামিয়ে দেওয়ার গুরুদণ্ড আরোপ করা হলো। আদেশে আরও বলা হয়েছে পদাবনতি বলবৎ থাকার সময়কাল তিনি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির জন্য গণনাযোগ্য হবেন না। তবে শাস্তির মেয়াদকাল শেষ হলে তিনি সয়ংক্রিয়ভাবে ৫০, ০০০- ৭১, ২০০ টাকার বেতন স্কেলে প্রত্যাবর্তন করবেন। তিনি কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না।
জালিয়াতি করে পদোন্নতিঃ রাজউক সূত্র বলেছে, তিনি এই শাস্তি পেয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী (ডিজাইন ও নকশা) পদে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হুওয়ার ফলে। পদোন্নতির জন্য নিয়ম অনুযায়ী তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ হেলালীর কাছ থেকে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি নেন আরেক প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌসের কাছ থেকে। বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ দিলে ৮ আগস্ট উজ্জ্বল মল্লিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তিনি লিখিত জবাব দিলে ১৮ আগস্ট তা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন রাজউকের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার। সূত্র বলছে, ওই পদে পদোন্নতির তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন আব্দুল লতিফ হেলালী ও দুই নম্বরে ছিলেন নুরুল ইসলাম। এ পদোন্নতির অংশ হিসেবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেছিল, সেখানে আপত্তি দিয়েছিল দুদক। অনাপত্তি চাওয়া হলে ছক আকারে পাঠানো পত্রে দুদক উজ্জ্বল মল্লিকের নামের পাশে দুদকের মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে টাকা পাচারঃ তার বিরুদ্ধে পূর্বাচল প্রকল্পে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি অভিযোগ থাকলেও সে তদন্ত চলে ঢিমে তেতালে। রাজধানী উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষ ( রাজউকের) পূর্বাচল প্রকল্পে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি অনুসন্ধানে, প্রকল্পের কিছু নথিপত্র তলব করে রাজউকের চেয়ারম্যানকে গত ১৬/৪/২০২৩খ্রিঃ তারিখে দুদকের স্মারক নং ০০.০১.০০০০.৫০১.০১.১৩০.১৮/১৪৬৮৫ মূলে এ পত্র প্রদান করা হয়েছে। অনুসন্ধানের জন্য ৩ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে। টিমের সদস্যরা হলেন:পরিচালক প্রবীর কুমার দাস,মো: সহিদুর রহমান ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
অনুসন্ধানের জন্য এই প্রকল্পের যেসব নথি চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: ১.পূর্বাচল প্রকল্পের ইছাপুর মৌজা এবং কামতা-হাড়ারবাড়ি-রঘুনাথপুর মৌজার মাটি ভরাট সংক্রান্ত নথি ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি। ২. পূর্বাচল প্রকল্পের পিডি উজ্জল মল্লিক দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ের লেক, মাটি ভরাট, উর্ধ্ব রাস্তা নির্মাণ,এবং উর্ধ্ব ড্রেন নির্মাণ সংক্রান্ত নথিপত্রও ৫ নং সেক্টরের লেক ভরাট সংক্রান্ত নথিপত্রের সত্যায়িত কপি। ৩. পূর্বাচল প্রকল্পের ওয়াটার সাপ্লায় এর বরাদ্দ ও ব্যয় সংক্রান্ত সমস্ত নথি। ৪. ফুর্বাচল প্রকল্পের লে-আউট কতবার সংশোধন হয়েছে সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি ও বিস্তারিত তথ্য। ৫. প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিকের নামে পূর্বাচল প্রকল্প হতে কতগুলো প্লট বরাদ্দ পেয়েছে এবং প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি। ৬.রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক পূর্বাচল প্রকল্পে ১৫০০ ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি ও রেকর্ড পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। ৭. ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং হতে ডিপিএম পদ্ধতিতে মালামাল ক্রয়ের সকল ওয়ার্ক অর্ডার,বিল পরিশোধ সংক্রান্ত সকল বিল ভাউচার ও এবং এ বিষয়ে কোন তদন্ত সংগঠিত হয়েছে কি না সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র এবং তদন্ত প্রতিবেদন (যদি থাকে)। ৮. পূর্বাচল প্রকল্পে শিকদার গ্রুপের অনুকুলে বরাদ্দকৃত প্লট সংক্রান্ত নথি ও রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। কিন্তু ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পূর্বে সেই তদন্ত আর আলোর মূখ দেখেনি। এর কারনও কারও অজানা নয়। তিনি ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১২০০ কোটি টাকার কাজ দিয়েছেন। এর মধ্যে শত শত কোটি টাকার কাজ পিপিআর ২০০৮ এর ব্যাত্যয় ঘটিয়ে সরাসরি ক্রয় (ডিপিএম) পদ্ধতিতে দিয়েছেন। এই ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং হলো আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও কুষ্টিয়া ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জনাব মাহাবুবুল আলম হানিফের নেপথ্য মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মাহাবুবুল আলম হানিফ, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী থাকা কালীন এক চেটিয়া সেনাবাহিনী, পানি ঊন্নয়ন বোর্ডে কাজ পেয়েছিল। ওয়েস্টার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং ৩৬টি ড্রেজার সহ অন্যান্য কন্সট্রাকশন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নাম করে ওভার ইনভয়েসিং করে হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ,সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ড ও ভারতে টাকা পাচার করে। মাহাবুবুল আলম হানিফ ছিলেন শেখ হাসিনার ক্যাশিয়ার। ফলে তার আনুকূল্যে উজ্জ্বল মল্লিকও এক প্রকার শেখ পরিবারের গ্রীন কার্ড হোল্ডার হয়ে যান। আর যার উপর শেখ পরিবারের আশীর্বাদ থাকে তাকে আর পায় কে। শেখ হাসিনার পিয়ন সাড়ে চারশত কোটি টাকার মালিক তাতো তিনি নিজেই পাবলিক মিটিং এ বলেছেন, তাহলে উজ্জ্বল মল্লিক এর হাজার কোটি থাকবে না কেন? শেখ পরিবারের অর্থ যোগানদাতাকে ঘাটাবে, দুদকেরই ঘাড়েই বা কয়টি মাথা? রাঘব বোয়ালদের কাছ থেকে বকশীষ নিয়ে চুপ করে থাকা আর চুনোপুটিদের ধরবে এটাই ভালো মনে করতো দুদক।
র্যাংগস ভবন অপসারণ ও ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পে দুনীতি : ২০০৭-২০০৮ ইং সময়ে বিজয় সরণির মুখে তেজগাঁ রেলক্রসিং এর উপর ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক থাকাকালে র্যাংগস ভবন ভাঙ্গা ও অপসারণের সময় একই এলাকার ঠিকাদার এর সাথে যোগসাজশে চরম অব্যবস্থাপনার দরূন ১৩ (তের) জন নিরীহ শ্রমিক এর অপর্মতুর জন্য দায়ী উজ্জল মল্লিক। র্যাংগস বিল্ডিং এর মালিক এ সংক্রান্ত মামলাও দায়ের করেন। এত বৃহৎ অবকাঠামো অপসারণের কাজে যোগ্য ও অভিজ্ঞ পরামর্শকের নি:সন্দেহে প্রয়োজনীতায় ছিল। তথাপি তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক এর ছত্রছায়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার একক দায়িত্ব নেন উজ্জ্বল মল্লিক। যার ভার বহন করতে না পারায় পরবর্তী ছাদগুলি একসাথে ভেঙ্গে পড়ে এবং অকালে ১৩ (তেরো) জন শ্রমিক মারা যায়। কিন্তু উজ্জ্বল মল্লিক এর কিছুই হয়নি।
ব্রীজের ডেক বাস্তবে নিচু করে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিঃ প্রজেক্ট প্রোফাইল অনুযায়ী সারা বছর এ সকল লেক-এ পানি থাকবে এবংপর্যটন ও পরিবহন ব্যবস্থার মোডাল স্প্লিট নিশ্চিত করনে নৌযান চলবে।অথচ উজ্জ্বল মল্লিক ডিজাইন এর বত্যয় ঘাটিয়ে প্রতিটি ব্রীজের ডেক বাস্তবে নিচু করে দিয়েছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনৈতিকভাবে লাভবান করে বখরাবাজির লক্ষ্যে এমনভাবে ব্রীজগুলো তিনি এমনভাবে নির্মাণ করিয়েছেন যাতে ছোট ডিঙ্গি নৌকাও চলাচল করতে পারবে না। এ ব্যাপারের রাজউক এর ৪৬৫ কোটি টাকা ক্ষতি শিরোনামে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়। কিন্তু এই উজ্জল মল্লিক এর অপকর্মের কোনই বিচার হয়নি।
মাটি ভরাটে নয় ছয়ঃ এছাড়ও পূর্বাচল প্রকল্পের বিভিন্ন মৌজায় বিভিন্ন উচ্চতা রেখে প্রকল্পের সৌন্দর্য্য ও ভুমির ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা। যেমন-ইছাপুর মৌজায় ৭.০০ আর০এল এর বিপরীতে কমতা-হাড়ারবাড়ী রঘুরামপুর মৌজায় ১৩০০ আর-এল থাকবে। অথবা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে সব মৌজার আর. এল এক সমান করে উপরস্থ মাটি নিচে ভরাট করে উপরোক্ত মাটি ভরাটের বিল হিসেবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উজ্জল মল্লিক।
৩০০ ফিট সংযোগ ব্রীজ এর অনুমোদনে শত কোটির লেনদেনঃ রাজধানীর কুড়িল থেকে পুর্বাচল অভিমূখে ৩০০ ফিট রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন বেসরকারি হাউজিং প্রকল্পের সংযোগ ব্রীজের প্রতিটির অনুমোদন দিতে ২৫ কোটি করে লেন্দেন হয়েছে। এই লেনদেনে ভাগ পেয়েছেন সাবেক পূর্তপ্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ; ততকালীন সচিব কাজী ওয়াসী উদ্দিন সহ মন্ত্রণালয় ও রাজউকের চেয়ারমেন সহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
পূনর্বাসন প্লটে অনিয়মঃ অতি সম্প্রতি রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে ১.৫০০(পনের শত) ক্ষতিগ্রস্থদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। জানা গেছে, দুটি বরাদ্দে যে স্থান নির্ধারন করা হয়েছে তা এপার্টমেন্ট ফর মিডিল এন্ড রৈা ইনকাম পিপিলদের জন্য সংরক্ষিত। পূর্বাচল প্রকল্পের লে আউট উপযুপরি ৪র্থবার সংশােধন করার পর প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দের কারণে বেলা কর্তৃক রাজউক এর বিরুদ্ধে মোকদ্দমা রুজু করা হয়। উক্ত প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দে জনশ্রুতি রয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাটেক্স কে দিয়ে প্লটের বিবর্তন ঘটানোর সার্বিক কার্যক্রম সম্পাদন করেছে এই উজ্জ্বল মল্লিক। ঐসময় প্রায় ৪৫ শত কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়। উক্ত অপকর্মে জড়িত ছিলেন সে সময়কার মন্ত্রী চট্রগ্রামের ইঞ্জিঃ মোশারফ হোসেন, তৎকালীন রাজউক চেয়ারম্যান আঃ রহমান, পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক শেখ শাহীন এবং উজ্জ্বল মল্লিক। পূর্বাচলের ৪র্থ সংশোধনীর উপর যেখানে মামলা চলছে সেখানে কিভাবে পুণরায় সংশোধনী করা হল তা কারো জানা নেই। সম্প্রতি এরূপ, ১০০ টি বরাদ্দে অনিয়মের আশ্রয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদেরকে বাদ রেখে টাকা খেয়ে অন্যান্য নন ডিজার্ভিং লোককে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে গণপূর্ত মন্ত্রী, রাজউক এর অধুনা-প্রক্তন চেয়ারম্যান সাঈদ নুর, পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক শেখ শাহীন, পরিচালক প্রশাসন হাসানসহ এই কার্যক্রমের সাথে জড়িত অন্যান্যরা মিলে প্রায় ১০০ (একশত ত্রিশ) কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন যার সর্বাধিনায়ক এই উজ্জল মল্লিক।
ইসকন কার্ড ব্যবহারঃ তার বিরুদ্ধে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে ফিরিয়ে আনতে ইসকনকে দিয়ে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলমান রাখার বিষয়ে অভিযোগ আছে।
নিয়ম ভেঙ্গে নিজ নামে প্লট নেয়াঃ রাজউকের নথি ঘেঁটে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক ২০০৯ সালে প্রকল্প কর্মকর্তা হয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে যোগ দেন। পরে তিনি ওই প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক এবং পরে পদোন্নতি পেয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হন। ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি পিডি ছিলেন। একপর্যায়ে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী হয়েও পিডির পদে ছিলেন। পরে তাঁকে পিডির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পিডি থাকাকালে প্রকল্পের মহাপরিকল্পনায় বাণিজ্যিক ব্লকের সঙ্গে থাকা একটি আরবান ইউটিলিটি ফ্যাসিলিটির (ইউইউএফ) জায়গায় ৭ কাঠা আয়তনের প্লট বানিয়ে নিজের নামে বরাদ্দ নেন। পূর্বাচল প্রকল্পের ৫ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডের ৯১ নম্বর প্লটটির জন্য সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ প্লটটির বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৫ নম্বর সেক্টরে ১০৩ নম্বর প্রধান সড়ক লাগোয়া বাণিজ্যিক ব্লক। এই ব্লকের শেষ অংশে লেকপাড়ে বেশ কিছু জায়গা খালি রাখা হয়েছিল নকশায়। আরবান ইউটিলিটি ফ্যাসিলিটি (ইউইউএফ) হিসেবে চিহ্নিত ওই জায়গা রাখা হয় মূলত প্রয়োজন সাপেক্ষে পরিষেবা অবকাঠামো স্থাপনের জন্য। নকশা পরিবর্তন ও লেক ভরাট করে সেখানে সৃজন করা হয় দুটি প্লট, যার নম্বর ৯১ ও ৯৩। এর প্লট একটি নেন তৎকালীন প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পরে প্রকল্প পরিচালক) নিজেই, অন্যটি বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্ত্রীর নামে। শুধু যে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে তা নয়, কম দামে নেওয়ার জন্য প্লটের শ্রেণিতেও আনা হয় পরিবর্তন। বাণিজ্যিক ব্লকে অবস্থিত প্লট দুটির বাজারদর কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা হলেও আবাসিক প্লট হিসেবে তা বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্লটের শ্রেণির মারপ্যাঁচে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কম পেয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেকপাড়ের ৯১ নম্বর প্লটটি নিজ নামে বরাদ্দ নেন রাজউকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জ্বল মল্লিক। তিনি দীর্ঘ সময় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম), ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (এপিডি) এবং ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২১ সালে উজ্জ্বল মল্লিক রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পিডি হন তাঁরই আস্থাভাজন কর্মকর্তা মনিরুল হক। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ পদ পিএম হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেই লেকপাড়ে প্লট দুটি সৃজন করান উজ্জ্বল মল্লিক। আর কাজটি যেন বিনা বাধায় করা যায়, সে জন্য প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাটা এক্সপার্টের মালিক জাহাঙ্গীর কবীরকেও দলে ভিড়িয়ে নেন তিনি। একই সেক্টরের ৯৩ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ পান জাহাঙ্গীর কবীরের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা কবীর। কাগজপত্রে প্লট দুটি সাড়ে ৭ কাঠা দেখানো হলেও সীমানাপ্রাচীরে তাঁদের দখলে আছে ১০ কাঠা করে মোট ২০ কাঠা জমি। এই দুটি প্লট বর্তমানে গাছপালা আচ্ছাদিত বাগানবাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারের প্রায় ১৯ কোটি টাকা গচ্চা গেলেও ৫ আগস্ট পরবর্তী এক বছরে বাতিল হয়নি তার প্লটের বরাদ্দ। ১৯ কোটি টাকা আদায়েও নেয়া হয় নি কোন উদ্যোগ। জুলাই চেতনার ফেরিওয়ালা কর্তা ব্যক্তিরা কি তবে ১৯ কোটির ভাগ পেয়েই চুপ থাকছেন, জাতির বিবেকের কাছে এ আমাদের প্রশ্ন।উজ্জ্বল মল্লিকের মতো দূর্বৃত্ত যে কিনা পাশ্চাত্যে সম্পদের পাহাড় গরেছেন, তিনি পেনশন প্রাপ্তি বা সম্মানের তোয়াক্কা করবেন এমন ভাবার সুযোগ নেই। এই ইসকন সদস্যের যে ভারতীয় নাগরিকত্ব আছে তা সহজেই অনুমেয়। তাই তাকে দেশ ত্যগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েও কোন লাভ নেই, যখন দরকার মনে করবেন তখন বিমান বন্দর দিয়ে ভিন দেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে বুক ফুলিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন।তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হোক। এত এত ভয়ঙ্কর অপরাধের ক্ষেত্রে পদাবনমন কোন শাস্তি হতে পারে না। পান থেকে চুন খসলে যাভাবে পূর্তমন্ত্রণালয় সাস্পেন্ড করে দেয়, বালিশ কান্ডের মিডিয়া ট্রায়ালে এর সহস্র ভাগের একভাগ অপরাধ করে ১৯ জন কর্মকর্তা প্রায় ৫ বছর জেল খেটেছেন সেখানে উজ্জ্বল মল্লিকের বেলায় এত মানবিক কেন? দাগী আসামীর প্রতি পূর্তমন্ত্রনালয়ের দরদ দেখলে নেটিজেনদের মতো বলতে হয়,” মানবতা এখনও বেচে আছে।“