ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা বন্ধের হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

সময়: 12:54 pm - October 16, 2024 |

মানব কথা: ৩০ দিনের মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে ইসরাইলকে চিঠি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেটি না করলে কিছু মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন।

এটি ইসরাইলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে কঠোর লিখিত সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরাইল গত এক মাসে উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ মানবিক চলাচল বন্ধ বা সীমাবদ্ধ করেছে।

উত্তর গাজায় ইসরাইলের চালানো আক্রমণের ফলে দক্ষিণ গাজায় বেসামরিক মানুষ ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তার মাঝেই এমন চিঠি পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পর ইসরাইল তা পর্যালোচনা করছে।

একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছে যে ‘আমাদের দেশ এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে’। যুক্তরাষ্ট্র যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে তার সমাধানও করতে চায় তারা।

ইসরাইল অবশ্য এর আগে বলেছে তাদের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল। তারা কোথাও মানবিক সাহায্য প্রবেশ করতে বাঁধা দিচ্ছে না।

সোমবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্য ভর্তি ৩০টি লরি উত্তর গাজায় প্রবেশ করেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, ইসরাইলকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের মধ্যে ‘বিপর্যয়কর পরিস্থিতি’ সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সহায়তা সরবরাহ সীমিত করার মাধ্যমে ‘দুর্ভোগ বাড়ানো’ বন্ধ করতে হবে।

দখলকৃত ফিলিস্তিন এলাকায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রধান আন্তোইনি রেনার্ড বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, উত্তর গাজা এলাকার মানুষ ‘পুরোপুরি খাদ্য সহায়তার’ ওপর নির্ভরশীল। জাতিসঙ্ঘ সংস্থাগুলোর বিতরণ করা খাবার ছাড়া তাদের আর কোনো মাধ্যমে খাবার পাওয়ার উপায় নেই।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরাইলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। দেশটি ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে গত এক বছরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নানা ধরনের সহযোগিতা করে আসছে।

দুদিন আগে পাঠানো ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ডিফেন্স সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন। চিঠিতে ‘অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার আদেশের কারণে ১৭ লাখ মানুষকে একটি সংকীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয় নিতে হয়েছে যেখানে তারা ‘মারাত্মক সংক্রামণের উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছেন।

চিঠিতে ইসরাইল সরকারকে এ মাসে ‘অবিলম্বে টেকসই পদক্ষেপ’ নিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলকে ‘এখন থেকে শুরু করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে’ মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে সেটি ‘মার্কিন নীতির ওপর প্রভাব’ ফেলতে পারে।

চিঠিতে মার্কিন মানবিক সহায়তায় বাধা সৃষ্টিকারী দেশগুলোর জন্য সামরিক সহায়তা বন্ধ করা বিষয়ক বিভিন্ন মার্কিন আইনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে ইসরাইলকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বেশ কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এসবের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া, সহায়তা সরবরাহের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং সামরিক প্রয়োজন ছাড়া বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ বাতিল করা।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের কাছে ওই চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

যেখানে মিলার বলেছেন, গোপন কূটনৈতিক মাধ্যমে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন চায়নি চিঠির বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাক।

যেহেতু সংবাদমাধ্যমে চিঠির প্রসঙ্গ চলে এসেছে তাই তিনি বিষয়টি খোলাসা করেছেন।

যদি গাজায় মানবিক সহায়তা না বাড়ায় ইসরাইল, তাহলে তার পরিণতি কি হতে পারে সে বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি মিলার।

পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আরো জানান, গাজায় এখন যে পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে, সেটা ‘খুবই কম’। এর আগেও এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রশাসন বলার পর প্রবেশাধিকার বাড়ানো হয়েছিল।

এর আগে মঙ্গলবার ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ রেড ক্রস বা আইআরসি সতর্ক করে বলেছে উত্তর গাজায় ১০দিন আগে থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলার কারণে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

ইসরাইলি বাহিনী বলেছে, তারা তৃতীয়বারের মতো জাবালিয়া শহরে অভিযান চালাতে চায় হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করতে।

জাতিসঙ্ঘ বলছে, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে গেছে। কিন্তু অসুস্থতা অন্য অক্ষমতার কারণে অনেকের জন্য তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াও প্রায় অসম্ভব।

গাজার হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে মঙ্গলবার জাবালিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইসরাইলি বিমান ও কামান হামলায় নিহত ৪২ জনের লাশ উদ্ধার করেছে তারা।

এরমধ্যে একই পরিবারের ১১জন সদস্য রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে পণবন্দী করা হয় বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

এরপর থেকে গাজায় ইসরাইল অভিযান শুরু করে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ইসরাইলি অভিযান শুরুর পর গাজায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ৩৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর