আসন্ন রজমানকে ঘিরে ভেজাল `নিউ বাঘাবাড়ি ঘি’র ব্যবসা জমজমাট

সময়: 8:27 am - February 2, 2025 |

মানবকথা ডেক্স : রাজধানীর মালিবাগ বাজারে ১০৫২ নং বাসায় (প্যালেস হাউস) নিউ বাঘাবাড়ি ঘি এর কারখানার খোজ পাওয়া গেছে। কিন্তু আদতে ঘি এর কারখানা হলেও কারখানার কোথাও এক ফোটা দুধও নেই। আছে শুধু কয়েকটি ড্রাম আর খালি বোতল । দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেজাল ঘি কিনে এনে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া সমির ঘোষ এর নিউ বাঘাবাড়ি ঘি এর কথা বলছি।

আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ‘নিউ বাঘাবাড়ি ঘি’ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে ঘি পরে এসব ভেজাল ঘি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় খাবার উপযোগী করে বোতলে ভরে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকে। ঘি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক সমির ঘোষের নিউ বাঘাবাড়ি ঘি কে জালিয়াতির কারণে আগেও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলো ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযোগ ছিলো ট্রেড লাইসেন্স ঘি প্যাকেজিং ও সরবরাহের, কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা ঘি সংগ্রহ করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তা নিজেদের বলে বিক্রি ও রফতানি । শেষে নিরাপদ খাদ্য আইন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ওই জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। অভিযানের সহযোগিতায় ছিল র্যা ব-৩।

অভিযানে অংশ নেয়া সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, সংগৃহীত ঘি অননুমোদিতভাবে নিজের ব্র্যান্ডের বলে প্রচার, চটকদার বিজ্ঞাপন ব্যবহার এবং জাতীয় পতাকার সিল ব্যবহার করে অনুমোদন ছাড়া ঘি রফতানির অভিযোগে ঘি নিউ বাঘাবাড়ি’র মালিক সমির ঘোষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটির নাম নিউ বাঘাবাড়ি এর মালিক সমির ঘোষ। প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে প্যাকেজিং ও সরবরাহকারী হিসেবে। কিন্তু বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ঘি’য়ের প্যাকেট ও সরবরাহ করে পণ্যের গায়ে লিখছেন তিনি নিজেই উৎপাদনকারী। আইনে এটার কোনো সুযোগ নেই। তিনি মূলত সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে নিয়ে আসেন। যা নিজের উৎপাদিত বলে চালিয়েছেন, যা প্রতারণা।

দ্বিতীয়ত নিজের ঘি’য়ের প্যাকেটের গায়ে বেশ কিছু পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করেছেন, যা তিনি করতে পারেন না। কারণ তার ব্র্যান্ডের ঘি’য়ের পুষ্টিগুণের ল্যাব টেস্ট বা ল্যাব সার্টিফায়েড না। তৃতীয়ত: তিনি ঘি’য়ের মতো একটি রুচিশীল পণ্যের প্যাকেজিংটা করেন করছিলেন অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে ।

চতুর্থত: নিরাপদ খাদ্য আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, কোনো প্রোডাক্টের কাঁচামাল যেখান থেকে কিনে নিয়ে আসবেন সেখানকার চালান সংরক্ষণ করতে হবে। তার গোডাউনে প্রচুর কাঁচামাল রয়েছে কিন্তু তিনি একটি মাত্র চালানের কপি দেখাতে পেরেছেন। পঞ্চমত: তার অফিস থেকে বেশ কিছু স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে লেখা তিনি সিডনিতে ঘি রফতানি করেন। অথচ তার এক্সপোর্ট লাইসেন্স নেই। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যদি ঘি রফতানি করেন তাহলে ল্যাব টেস্ট সার্টিফায়েড হতে হবে, কাস্টমসের ছাড়পত্র লাগবে। অননুমোদিত ঘি রফতানি করলে দেশের বদনাম হবে। যদিও তিনি সেটা করে আসছিলেন।’

ষষ্ঠত: তিনি তার ঘি’য়ের কৌটায় বাংলাদেশের পতাকার সিল ব্যবহার করেছেন। ইতোপূর্বে এমন প্রতারণা কখনো দেখা যায়নি। ঘি ব্যবহারের পর ওই কৌটা মানুষ ফেলে দিতে পারে। এতে পতাকার অবমাননা হয়। এভাবে অনুমোদন ছাড়া পতাকার ছবি বা সিল ব্যবহার পতাকা আইনে অপরাধ। সপ্তমত: মালিকের ঘি’য়ের ব্র্যান্ডের নাম সমির ঘোষ। কিন্তু তিনি এর সাথে ‘সমির ঘোষের স্পেশাল গাওয়া ঘি’ লিখেছেন। এমন চটকদারি বিজ্ঞাপনের ব্যবহার মানুষকে প্রতারণা করার শামিল। কারণ তার এটার অনুমোদন নেই। গাওয়া ঘি কিন্তু আরও ইমপ্রুভড ও অধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হয়।’

পলাশ কুমার বসু বলেছিলেন, এসব অভিযোগের কোনোটারই সদুত্তর দিতে পারেননি সমির ঘোষ। যে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইনের বিভিন্ন ধারায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। তিনি নগদে ১০ লাখ টাকা জরিমানা পরিশোধ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শনির আখড়া এলাকার এক বিক্রেতা জানান, ভালো মানের প্রতি কেজি ঘিয়ের দাম দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। তবে ভেজাল ঘি কেজিপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব ভেজাল ঘি পাইকারি দরে খুচরা বিক্রেতারা ৫০০-৬০০ টাকায় কেনেন। বেশি লাভ হওয়ায় ভালো মানের ঘিয়ের চেয়ে খারাপ ঘি বিক্রিতেই বেশি উৎসাহ ব্যবসায়ীরা।
পণ্য ও সেবার মান প্রণয়ন, গুণগতমান ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণসহ ভোক্তা স্বার্থ রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কিছু অসাদু লোক তার সাথে জড়িত । বিএসটিআই এর গাফলতির কারণে নিউ বাঘাবাড়ি ঘি সহ দেশের আনাছে কানাছে গড়ে উঠেছে অবৈধ্য কারখানা আর এসব ভেজাল খাবার খেয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। রমজান উপলক্ষে ঘিয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর তৈরি এসব ভেজাল ঘিয়ে এখন সয়লাব হয়ে পড়েছে বাজার। এসব ভেজাল কারখানার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আসন্ন রজমানকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে এসব ভেজাল ঘি ।
এসব বিষয় জানতে, নিউ বাঘাবাড়ি ঘি এর মালিক সমির ঘোষকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আগের বিষয় টানছেন কেন ? আগে যা হয়েছে তা বাদ দেন । তিনি এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে তার অফিসে আসতে বলেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর