ঝিনাইদহে তালাকের মহামারি, প্রতিদিন ৮টি বিয়ে বিচ্ছেদ

মানব কথা: বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ঝিনাইদহ রয়েছে অনেকটা এগিয়ে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তুচ্ছ ঘটনায় নিমেষেই ভেঙে যাচ্ছে বিশ বছরের সংসার। এ ক্ষেত্রে ঝিনাইদহে নারীরা এগিয়ে রয়েছে। জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৮টি বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে।
রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানায়, ২০২৪ সালে ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় মোট বিবাহ হয় সাত হাজার ৩২৭ জন নারী-পুরুষের। এর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে তিন হাজার ১৭৭ দম্পতির। প্রতিদিন গড়ে আটটি করে বিচ্ছেদ ঘটছে এ জেলায়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২৪ সালে ১ হাজার ১৬৬ জন নারী তাঁর স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। অন্যদিকে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন মাত্র ২৫৯ পুরুষ। তবে উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৭৫২টি। ২০২৩ সালেও ঝিনাইদহ জেলায় তালাক দেওয়ায় এগিয়ে ছিলেন নারীরা।
ওই বছরে এক হাজার ৭৪৬ জন নারী তালাকের আবেদন করেন। পক্ষান্তরে পুরুষ করেন মাত্র ৩৮৪টি। ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৪৬টি বিবাহ হয়। ওই বছরে মোট তালাক হয় তিন হাজার ৯৮৪টি। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছরে ঝিনাইদহ জেলায় অন্তত ১৮ হাজার বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে।
কালীগঞ্জ ও শৈলকুপা পৌরসভা থেকে পাওয়া তালাক নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পুরুষরা বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হিসেবে পরকীয়া ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া ও দুর্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে নারীদের করা আবেদনে শাশুড়ি ও ননদের অত্যাচার, স্বামীর সন্দেহের মনোভাব, মাদকাসক্তি, নির্যাতন, যৌতুক, মানসিক নিপীড়ন ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমরান নামের এক যুবক বলেন, ‘আমি বাড়িতে না থাকার সুযোগে আমার স্ত্রী টিকটক করত। এই কাজ করতে গিয়ে সে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আমার জমানো টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। আমার একটি সাত বছরের মেয়ে রয়েছে।’
জান্নাতুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি কাজের জন্য দেড় বছর ঢাকায় ছিলাম। বাড়ি এসে জানতে পারি আমার স্ত্রী অন্যের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে চলে গেছে।’
জেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে স্বামী যদি স্ত্রীকে নিকাহনামার ১৮ নম্বর কলামে ক্ষমতা প্রদান করেন, তবেই স্ত্রী তাকে তালাক দিতে পারবে, তা ছাড়া স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না। সমাজে যেভাবে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে, তার বেশির ভাগই শর্ত পূরণ হচ্ছে না। ফলে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে সমাজে দিন দিন বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট এস এম মশিয়ূর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সমাজে পারিবারিক বন্ধন পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। ফলে সন্তানের ওপর অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ কমেছে। সন্তানরা কী করছে তা অভিভাবকরা দেখছেন না। ফলে মোবাইলে আসক্ত হয়ে তরুণ-তরুণীরা বিপথগামী হচ্ছে। এ অবস্থায় তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও তা টিকছে না। এখন অনেক শিক্ষিত নারী-পুরুষের মধ্যেও বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা দেখা যাচ্ছে।’