জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দে অনিয়ম, সরকারের ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২৬৫তম বোর্ড সভার আলোচ্য বিষয়-২৪ এ ঢাকার মিরপুরস্থ সেকশন-৬ মেইন রোড, ব্লক-ক এর ১,২,৩ ও ৪ নং প্লট কে পূর্নবাসন প্লট হিসাবে বানিজ্যিক প্লট হিসাবে এবং ব্লক-খ বাউন্ডারি রোড এর ৩৯/১ নং প্লট কে পূর্নবাসন প্লটটির সংশোধিত বরাদ্দ প্রদান করছেন যা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ নীতিমালায় বানিজ্যিক প্লট নিলাম ছাড়া বরাদ্দ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দিয়ে সরকারের ২০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছে। যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিক প্লট হিসাবে ভবন নির্মান করে সরকারের কোটি কোটি ফাকি দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়েছে সেখানে তাদের উচ্ছেদ না করে বরং তাদেরকে পুরিস্কৃত করে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ নুরুল বাসির একশত কোটি টাকার বিনিময়ে তাদের কে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন যেটা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ নীতিমালায় বানিজ্যিক প্লট নিলাম ছাড়া হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। ঢাকার মিরপুরস্থ মেইন রোডের প্বাশে মিরপুর সেকশন-৬ মত গুরুত্বপূর্ন জায়গায় নিলাম মাধ্যমে প্রতিযোগিতা হলে সরকারি কোষাগারে কমপক্ষে ২০০ কোটি জমা হতো । জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ২৬৫তম বোর্ড সভার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হুবাহু তুলে ধরা হলো
২৪। আলোচ্য বিষয়: ঢাকার মিরপুরস্থ সেকশন-৬, মেইন রোড, ব্লক-ক এর ১, ২, ৩ ও ৪ নং পুনর্বাসন প্লট এবং ব্লক-খ, বাউন্ডারি রোড এর ৩৯/১ নং পুনর্বাসন প্লটটির বিপরীতে বাণিজ্যিক প্লটের সংশোধিত বরাদ্দের আবেদন প্রসঙ্গে।
আলোচনা: ঢাকার মিরপুরস্থ সেকশন-৬, মেইন রোড, ব্লক-ক এর ১, ২, ৩ ও ৪ নং পুনর্বাসন প্লট এবং ব্লক-খ, বাউন্ডারি রোড এর ৩৯/১ নং পুনর্বাসন প্লটটির তথ্যাদি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
(ক) সেকশন-৬, ব্লক-ক, মেইন রোডের পুনর্বাসন প্লট নং-১:
আলোচ্য ২৫০.০০ বর্গগজ আয়তনের পুনর্বাসন প্লটটি গত ২২.০৩.১৯৯৪ তারিখে ২১৫৩ নং স্মারকমূলে বর্তমান আবেদনকারী জনাব নিখিল চন্দ্র দাশ, পিতা-মৃত, সুরেশ চন্দ্র দাশ এর নামে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি হিসেবে সংশোধিত বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়। বরাদ্দপত্রের শর্তানুযায়ী তিনি সমুদয় কিস্তির টাকা এককালীন পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তিনি উক্ত প্লটটির বিপরীতে বাণিজ্যিক প্লটের সংশোধিত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন।
(খ) সেকশন-৬, ব্লক-ক মেইন রোডের পুনর্বাসন প্লট নং-২:
আলোচ্য ২৫০.০০ বর্গফুট আয়তনের পুনর্বাসন প্লটটি গত ২২.০৩.১৯৯৪ তারিখে ২১৫২ নং স্মারকমূলে বর্তমান আবেদনকারী জনাব মো. মকবুল হোসেন, পিতা-আ, সোবহান হোসেন এর নামে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি হিসেবে সংশোধিত বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়। বরাদ্দপত্রের শর্তানুযায়ী তিনি সমুদয় কিস্তির টাকা এককালীন পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তিনি উক্ত প্লটটির বিপরীতে বাণিজ্যিক প্লটের সংশোধিত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন।
(গ) সেকশন-৬, ব্লক-ক মেইন রোডের পুনর্বাসন প্লট নং-৩:
আলোচ্য ২৫০.০০ বর্গফুট আয়তনের পুনর্বাসন প্লটটি গত ২২.০৩.১৯৯৪ তারিখে ২১৫১ নং স্মারকমূলে বর্তমান আবেদনকারী জনাব লিটন চন্দ্র দাস, পিতা-মৃত, মাদব চন্দ দাস এর নামে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি হিসেবে সংশোধিত বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়। বরাদ্দপত্রের শর্তানুযায়ী তিনি সমুদয় কিস্তির টাকা এককালীন পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তিনি উক্ত প্লটটির বিপরীতে বাণিজ্যিক প্লটের সংশোধিত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন।
(ঘ) সেকশন-৬, ব্লক-ক মেইন রোডের পুনর্বাসন প্লট নং-৪:
আলোচ্য ২৫০,০০ বর্গফুট আয়তনের পুনর্বাসন প্লটটি গত ১২.০৫.১৯৯৪ তারিখে ২৫৬৫ নং স্মারকমূলে বর্তমান আবেদনকারী জনাব বশির উদ্দিন, পিতা-মৃত, তোছাদ্দেক হোসেন এর নামে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি হিসেবে সংশোধিত বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়। বরাদ্দপত্রের শর্তানুযায়ী তিনি সমুদয় কিস্তির টাকা এককালীন পরিশোধ করেছেন। ইতোমধ্যে বরাদ্দ প্রাপক মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে বরাদ্দ গ্রহিতার পুত্র জনাব আফজাল হোসেন উক্ত প্লটটির বিপরীতে বাণিজ্যিক প্লটের সংশোধিত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন।
(৩) সেকশন-৬, ব্লক-খ মেইন রোডের পুনর্বাসন প্লট নং-৩৯/১:
আলোচ্য ২৬৪.০০ বর্গগজ আয়তনের পুনর্বাসন প্লটটি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি হিসেবে জনাব আব্দুল হামিদ, পিতা-মৃতঃ
ইয়ার বক্স এর নামে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বরাদ্দ গ্রহীতা প্লটের অনুকূলে এককালীন টাকা পরিশোধ করেন। প্লটের বাস্তব দখল হস্তান্তরের জন্য পত্র জারি করা হয়। বরাদ্দ গ্রহীতা মোসাঃ মাসুদা বেগম, স্বামী-মোঃ আফজাল হোসেন ঢালী কে আমমোক্তার নিযুক্ত করেন। বর্তমানে আমমোক্তার গ্রহিতা উক্ত প্লটটির বিপরীতে বাণিজ্যিক প্লটের সংশোধিত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন।
উক্ত প্লটসমূহের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী, ঢাকা ডিভিশন-১ কে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য পত্র দেয়া হলে স্মারক নং-২৫.৩৮.০০০০.৬০৩.১৮.০০১.২৩.৩৮০, তারিখ: ২৭.০১.২০২৫ এর মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সেকশন-৬, ব্লক-ক, মেইন রোডের ১, ২ ও ৪ নং প্লটসমূহের বাস্তব দখল কারো নিকট হস্তান্তর করা হয়নি।
পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আলোচ্য প্লটসমূহ অনুমোদিত নকশায় বাণিজ্যিক হিসেবে চিহ্নিত থাকলেও পূর্বে
পুনর্বাসন প্লট হিসেবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্লটসমূহের বরাদ্দগ্রহিতাগণ বর্তমান পর্যায়ে উক্ত প্লটসমূহ বাণিজ্যিক হিসেবে সংশোধিত বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন। যেহেতু অনুমোদিত নকশায় প্লটসমূহ বাণিজ্যিক হিসেবে চিহ্নিত আছে কিন্তু পুনর্বাসন হিসেবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে সেহেতু আবাসিক হতে বাণিজ্যিক হিসেবে রূপান্তরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ফি আদায় সাপেক্ষে বরাদ্দ গ্রহিতার নামীয় এওয়ার্ড সনদ, অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত সিটিআর প্রভৃতি যাচাই-বাছাই করে প্লটসমূহ বাণিজ্যিক হিসেবে সংশোধিত বরাদ্দ প্রদান করা যেতে পারে মর্মে উপস্থিত সদস্যগণ একমত পোষণ করেন। প্রতিবেদক সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখেন কয়েক বছর আগে থেকেই বাণিজ্যিক প্লট হিসাবে ব্যবহার করছে এপেক্স শো-রুম রয়েছে সেখানে জামা কাপড় কেনা শপিং দোকান সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক দোকান। প্রতিবেদক অনুসনন্ধান কালে আরেক টি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে ১৮৬ তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয় ঢাকার মিরপুরস্থ সেকশন-৬ মেইন রোড, ব্লক-ক এর ১,২,৩ ও ৪ নং প্লট ও ব্লক-খ, বাউন্ডারি রোড এর ৩৯/১ নং প্লট বানিজ্যিক প্লট হিসাবে গন্য করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদনের সাপেক্ষে দুই টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত করে নিলাম করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে ফ্যাসিবাদ কায়েম নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাণিজ্যিক প্লট নিলাম ছাড়া পুনর্বাসন বরাদ্দ নামে শত কোটি টাকার বানিজ্যের বিষয় চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ নুরুল বাসির রুখে দিতে হবে না হলে অল্প কিছুদিন পরে তিনি সরকারের সচিব হলে দেশের বিরাট ক্ষতির মুখে পড়বে। এই বিষয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা হাউজিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ হারিজুর রহমান বলেন ২৬৫ বোর্ড সভায় কি সিদ্ধান্ত হয়েছে ফাইল দেখে বলতে হবে তবে মাঠ পর্যায়ের ফিল্ড রিপোর্টে নেগিটিভ দিলে বোর্ড সভায় অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ থাকে না। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল বাসির বলেন সরজমিনে যান ও বিস্তারিত অনুসন্ধান করেন তাহলে বোর্ডের সিদ্ধান্ত বুঝতে পারবেন।