নাইক্ষংছড়িতে টানা ভারী বর্ষণে ১৪ গ্রাম প্লাবিত
মানব কথা: বান্দরবান পার্বত্য জেলার মায়ানমার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত (১২, ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর) এক টানা তিন দিনের অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ১৪টি দুর্গম পল্লী পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের আর্দশগ্রাম, বিছামারা, কম্বনিয়া এলাকার রাস্তা-ঘাট ও নিম্মাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর জানান সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যার নুরুল আবছার।
এছাড়া সোনাছড়ি ইউনিয়নের নন্নাকাটা, জুমছড়ি, জমখোলা টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে রাস্তাসহ উপজাতী পল্লী পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এন্যানিং মার্মা।
মায়ানমার সীমান্ত ঘেষা দৌছড়ির তুলাতলী ও লেমুছড়িসহ কয়েকট এলাকা পানিতে প্লাবিত হওয়ার খবর জানান দৌছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মো: ইমরান।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেলে ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও তার আশপাশের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০১ মিলিমিটার। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দূরুত্ব ২৫কিলোমিটার। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পাহাড় ধসের মত ঘটনা ও ঘটেছে। হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও উপজেলার কিছু কিছু নিম্মঞ্চালসহ ৭টি গ্রামে বন্যার পানিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল ছাপিয়ে প্লাবিত হয়েছে। অনেক জায়গাতে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ জানান, টানা তিন দিনের বর্ষণে সীমান্তের তুমব্রু খালের উপচেপড়া পানির ঢলে তুমব্রু বাজারসহ ৭ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা, তুমব্রুর মো: কাইছার জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে টানা তিন দিনের বর্ষণের ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পাহাড়ের পানির ঢলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে একইসাথে।
অপর দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, বাইশারী, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজলা পাশ্ববর্তী রামুর কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়ার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। তবে বিপৎসীমার নিচে বাঁকখালী নদী ও এলাকার ৫টি খালের পানি।
তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান, শাহজাহানসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তিন দিন ধরে টানা বর্ষণের ফলে,পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়তে থাকে শুক্রবার দুপুর থেকে। এতে তাদের দোকান পানিতে তলিয়ে যায়। এখন তারা বিপাকে। তিন দিন ধরে ভারী বষর্ষের ফলে উজান থেকে আসা পানির ঢলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয় এখানে।
কোনার পাড়ার বানিন্দা শাহ আলম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবারের এ বর্ষণের ফলে কোমর পানিতে তারা বড় বিপদে। তাই বাড়িতেই অবস্থান করছেন নানা কারণে।
বাজার পাড়ার বাসিন্দা ডা. মোহাম্মদ হোছাইন শুক্রবার বিকেলে বলেন, তুমব্রু খালের পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে পানি এখন গ্রামে ঢুকে পড়ে। এভাবে ৫ গ্রাম পানিতে তলিযে গেছে। গ্রাম গুলো হলো তুমব্রু কোনারপাড়া, বাজার পাড়া, মধ্যমপাড়া, উত্তরপাড়া ও তুমব্রু পশ্চিমকূল।
অপর দিকে উপজেলার উত্তরাংশের বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম কোম্পানী বলেন, ৩ দিনের টানা বর্ষণে তার এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বাইশারীতে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ পানি গ্রামে ঢুকেনি। তবে পানি ধীরে ধীরে বাড়ছিল।
তিনি আরো জানান, এছাড়া প্রবল এ বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন তিনি। বিশেষ করে মৌসূমী ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। তার ইউনিয়নের বাইশারী বাজার, নারিচবুনিয়া,চাক পাড়াসহ ৪ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয় বলে জানান।
এভাবে টানা বর্ষণে পুরো উপজেলায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে বলে ৫ ইউনিয়নের একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, যাতে তাদের আগাম রবিশষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হবে এমন আশঙ্কায় করছেন।
অপরদিকে রামু নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের নাইক্ষ্যংছড়ির জারুলিয়াছড়ি এলাকা পানিয়ে তলিয়ে যাওয়ায় এ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে। সে কারণে সড়কে চলাচলকারী গাড়ি ও যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে এখন বহুগুন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক বলেন, তিনদিন ধরে টানা বর্ষণ এখনো চলমান। তাই বীজতলা বা আগাম রোপা ফসলের ক্ষতি হবে কিনা অথবা কতটুকু হবে পরে জানাতে পারবেন আগে নয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে কর্মরত সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমাত জাহান ইতু বলেন, টানা এই তিন দিনের বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপদস্ত হয়ে পড়েছো। রাস্তা-ঘাট পানিতে নিমজ্জিত, সাধারণ মানুষকে চলাচলে সীমাহীন দূঁভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করার জন্য চেষ্ঠা চালাচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ের পাদদেশ ও ঝঁকিপূর্ণ খাল-নদীর থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
পক্ষান্তরে নাইক্ষ্যংছড়ির পাশ্ববর্তী রামু উপজেলার পুর্বাঞ্চলীয় ইউনিয়ন কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তিন দিন ধরে এ বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এখানকার নদী, খাল-বিল ঢলের পানিতে তলিয়ে গেলেও পাড়া-গ্রামে এ সংবাদ লেখাকাল অবধি পানি উঠেনি। তবে চরাঞ্চলে আগাম রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।