দুর্ভোগ নিরসনে দেশের ঐতিহাসিক জনপদ ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়নে বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক : কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলা প্রশাসনের সহজলভ্য সেবা থেকে বঞ্চিত গোমতী নদীর দক্ষিণ পাড়ের জনগণের দূর্ভোগ নিরসনে ঐতিহাসিক জনপদ ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়নের দাবী আদায়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুমিল্লা বিভাগ ও ময়নামতি জনপদের উন্নয়ন বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে ‘কুমিল্লা বিভাগ ও ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়নের গুরুত্ব’ শীর্ষক এক বৈঠক আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ মনিরুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলের আলাদা আলাদা উন্নয়নের সমষ্টিই হলো পুরো রাষ্ট্রের উন্নয়ন।কুমিল্লা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সহ বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। প্রত্নতাত্ত্বিক নানা নিদর্শন এর জন্য আন্তর্জাতিকভাবেও প্রসিদ্ধ কুমিল্লা ও ময়নামতি। সেই অনুযায়ী এই জনপদের কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে এই জনপদের মানুষ দাবি ও আন্দোলন করে আসছে।
মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, আজ থেকে ৬০ বছর পূর্বে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও সেটি তখন হয়নি। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নসহ কুমিল্লার জনপদকে সমৃদ্ধ করতে ১১ দফা দাবি নিয়ে কাজ করছে কুমিল্লা বাঁচাও আন্দোলন। এ নিয়ে মনিরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে আন্দোলন।
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, সহস্ত্র বছরের ঐতিহ্য ধারণ করছে ময়নামতি। অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক বাস্তবতায় ও বিকেন্দ্রীকরণের যুক্তিতে এখানে উপজেলা হওয়া উচিত ছিল আরো অন্তত অর্ধ শতাব্দী আগে। এখন এটি হতেই হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েই কুমিল্লা বাঁচাও আন্দোলনের ১১ দফা দাবী পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মনিরুল হক চৌধুরী ।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, জামায়াতে ইসলামীর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. মোবারক হোসেন, মেজর (অবঃ) মোস্তফা আল মামুন, কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ডিইউজে’র নির্বাহী সদস্য এম মোশাররফ হোসাইন, ডিইউজে’র নির্বাহী সদস্য নিজাম উদ্দিন দরবেশ নিজাম, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবদুস সালাম, ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার, অ্যাডভোকেট প্রহ্লাদ দেবনাথ প্রমূখ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মোনতাকিম। সংগঠনটির সদস্য সচিব বাসস’র বিশেষ প্রতিনিধি দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় আরো বক্তৃতা করেন যুগ্ম আহবায়ক- আবদুল মবিন খান, মাওলানা মফিজুল ইসলাম, অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির ও মো. জিল্লুর রহমান এবং যুগ্ম সদস্য সচিব কুমিল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা ও মো. আলাউদ্দিন, অধ্যপক মো. মনিরুল হক, এডভোকেট বিল্লাল হোসেন, কামরুজ্জামান কামরুল প্রমূখ।
বক্তৃরা বলেন, কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলায় অবস্থিত ময়নামতি একটি ঐতিহাসিক স্থান, বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ও প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন এর জন্য বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ। ময়নামতি অঞ্চল থেকে জেলা সদর কুমিল্লার দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। জেলায় বুড়িচং উপজেলার গোমতী নদীর পশ্চিমাংশে অবস্থিত ময়নামতিসহ একই উপজেলার অন্তর্গত মোকাম, ভারেল্লা উত্তর ও ভারেল্লা দক্ষিণ এই চার ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদরের দূরত্ব ক্ষেত্রবিশেষে ৮ থেকে ৪০ কিলোমিটার। অপরদিকে, গোমতি নদীর পূর্বাংশে বুড়িচং উপজেলার বাকি পাঁচটি ইউনিয়নের অবস্থান।
গোমতীর দক্ষিণ পাড়ের ৪টি ইউনিয়নের মানুষকে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি সেবাপ্রাপ্তির যেমন- জমি রেজিষ্ট্রেশন, মামলা মোকদ্দমা, প্রতিষ্ঠানিক, স্বাস্থ্য বা শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা নিতে নদী পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরে যাওয়া আসা করতে নদীর উত্তর পাড়ের ৫টি ইউনিয়নের জনগনের তুলনায় প্রায় ৬ গুন সময় ব্যয় করতে হয়। সেইসঙ্গে যোগ হয় দ্বিগুণ আর্থিক ব্যয় ও কায়িক পরিশ্রম।
তারা বলেন, বুড়িচং থানা হিসেবে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে এবং পরবর্তীতে বুড়িচং উপজেলা হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও নানা ভোগান্তির কারণে ‘ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা ও ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নবাসী’ আলাদা উপজেলা প্রতিষ্ঠার দাবী জানিয়ে আসছিলো। এমনকি, বুড়িচং উপজেলা প্রশাসনের সহজলভ্য সেবা থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ পাড়ের মানুষের দুর্ভোগ জানতে পেরে ‘ময়নামতি উপজেলা’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও আন্তরিকতা প্রকাশ করেছিলেন। সভায় দ্রুত এ সংকট নিরসনে বুড়িচং উপজেলা থেকে গোমতী নদীর দক্ষিণ পাড়ের ৪টি ইউনিয়ন কে আলাদা করে, সহস্র বছরের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে ‘ময়নামতি’ নামে উপজেলা ঘোষণার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, জায়গা বরাদ্দ, খরচের বাজেট, আইনি বৈধতা, জনগনের স্বার্থ, জনমানুষের সহজ যাতায়াত ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে জেলা প্রশাসন কর্তৃক একটি কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও পরবর্তীতে মন্ত্রনালয়ে রিপোর্ট পাঠানো এবং জনগনের কষ্ট লাঘবে ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ভৌগলিক কেন্দ্র স্থলে উপজেলা কাঠামো এবং দপ্তরসমূহ নির্মানের দাবি জানানো হয়।