ইচাইল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

সময়: 1:08 pm - January 22, 2025 |

ময়মনসিংহ (ফুলবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস সহকারী খন্দকার মাহবুব আলম এবং তার স্ত্রী নজিবা আক্তার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, নজিবা আক্তার নিজেই অন্যের ইনডেক্স ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকতা।

জানা গেছে, ইচাইল উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৯৯ সালে যোগদান করেন বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী খন্দকার মাহবুব আলমের বড় ভাই সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার সাইদ আহম্মদের স্ত্রী শাহানা পারভিন। পরবর্তীতে এমপিওভুক্ত হন তিনি। তার ইনডেক্স নং-৪৮০৩০৬।
শাহানা পারভিন ইনডেক্সধারী হওয়ার পর দীর্ঘ ৯ বছর বিদ্যালয়ে না গিয়েও বেতন ভাতা উত্তোলন করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন।
স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এবং স্বামীর ছোটভাই অফিস সহকারী ও আওয়ামী লীগ নেতা, একইসঙ্গে স্কুলের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পরিবারঘনিষ্ঠ হওয়ায় তখন ক্ষমতার দাপটের কারণে প্রধান শিক্ষক বা অন্যরা কোনো উচ্চবাচ্য করতে পারেননি।
তবে এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে শিক্ষকতা ছেড়ে দেন শাহানা পারভিন।
এদিকে শাহানা পারভীনের দুর্নীতি ধামাপাচা দেওয়ার জন্য তারই ইনডেক্স নাম্বার-৪৮০৩০৬ বহাল রেখে সেখানে শিক্ষক হিসেবে অবৈধভাবে মাহবুব আলমের স্ত্রী নজিবা আক্তারের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ে ৬ জন অতিরিক্ত সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষক থাকায় এবং পদে আর প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার দাপটে সামাজিক বিজ্ঞানের অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে নজিবাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে সংশোধন করে একই ইনডেক্স নাম্বারে এমপিওভুক্ত হন নজিবা। বড় জায়ের ইনডেক্স নম্বর-৪৮০৩০৬ দিয়েই মার্চ ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত অবৈধভাবে সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করেন নজিবা।
এসব বিষয় নিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার, ময়মনসিংহ বরাবর অভিযোগ দাখিল করা হয়। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পায় এবং বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের জন্য মাউশি অধিদপ্তর, ঢাকা বরাবর জেলা শিক্ষা অফিসার থেকে স্মারক নং জে শি অ/ময়/২০২৪/৭৩২ তারিখ : ১২/০৮/২৪ ইং মূলে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনের আলোকে মাউশি অধিদপ্তর ঢাকা থেকে তার সরকারি বেতন ভাতা স্থগিত করার জন্য স্মারক নং৩৭.০২.০০০০.১০৭.৩১.৩৮১.২০১৪.১৯৩০ তারিখ দর্শানো নোটিস মোছা. নজিবা আক্তার বরাবর প্রেরণ করা হয় এবং নজিবা আক্তার ওই কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব মাউশি অধিদপ্তরে প্রেরণ করেন।
নজিবার কারণ দর্শানোর জবাব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হওয়ায় বেতন-ভাতা স্থগিতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সাইদ আহম্মদ বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো তদবির করে পুন:তদন্তের মাধ্যমে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার পায়তারা করছে।
এদিকে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতে পিছিয়ে নেই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী খন্দকার মাহবুবুল আলমও। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সাবেক এমপি মোসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে ৯টি প্রকল্প, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে পরপর দুইটি প্রকল্প এবং ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বাদলের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকার প্রকল্প বাগিয়ে নেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তারিখে বরাদ্দ পেয়ে বিদ্যালয়ের কোনো কাজ না করেই সব প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এসব নিয়ে এলাকায় অভিযোগ উত্তাত্থিত হয় ও বিভিন্ন মিডিয়ায় তা প্রকাশিত হয়। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, ময়মনসিংহ থেকে দুদক টিম গত ২২/১২/২০২৪ তারিখে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে যায় এবং অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পায়, যার তদন্ত এখনও চলমান।

এদিকে অভিযোগ মিলেছে, দুর্নীতিবাজ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার সাইদ আহম্মেদ চাকরি জীবনে অবৈধভাবে ঢাকা শান্তিনগরে একটি ফ্ল্যাট, ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন উত্তরা মডেল আবাসিক এলাকায় ৪ ইউনিটে ৫-তলা একটি বিলাসবহুল ভবন এবং ইচাইল নতুন বাজারে ১৩ শতক জমির ওপর দোকানপাট এবং শশুরবাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতি এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া বর্তমানে তিনি চলাফেরা করেন ৪০ লাখ টাকা মূল্যের দামী প্রাইভেট কারে। অবৈধ আয়ের মাধ্যমেই তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর