জলবায়ূ পরিবর্তন সংকট বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ

মো. ইয়াসিন: জলবায়ূ পরিবর্তন আজ বিশ্বের অন্যতম বড় সংকট, আর এর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। ভৌগোলিক অবস্থান, নিম্নভূমি প্রকৃতি, ঘনবসতি এবং সীমিত সম্পদের কারণে দেশটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষতির শিকার হয়ে উঠছে দ্রুত। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, খরা ও অতিবৃষ্টির মতো দুর্যোগ বাংলাদেশকে গভীর সংকটে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক পরিবারকে জীবিকা হারিয়ে বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতে হচ্ছে। এতে নগরায়ণ বেড়ে যাচ্ছে এবং নতুন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা, পানির স্বল্পতা ও জনস্বাস্থ্য সমস্যা দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা মাত্র এক মিটার বেড়ে গেলে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে এবং জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে।
তবে শুধু সমস্যা নয়, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ নানা পদক্ষেপও নিচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি, সবুজ প্রযুক্তি প্রচলন, জলবায়ূ সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে জলবায়ূ অর্থায়নের দাবি তুলে ধরছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন বাড়াতে হবে। অন্যথায়, জলবায়ূ পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো নিজেদের টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের জন্য জলবায়ূ পরিবর্তন শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয়, বরং অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, কৃষি ও মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এক বহুমাত্রিক সংকট। তাই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জনগণকে একযোগে এগিয়ে আসা জরুরি।