জুলাই শহীদের মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: তিন আসামির কারাদণ্ড

সময়: 10:49 am - October 22, 2025 |

মানব কথা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহতের কিশোরী মেয়েকে দলবেঁধে ধর্ষণের মামলার তিন আসামিকে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তাদের মধ্যে দুজনকে ১৩ বছর এবং একজনকে ১০ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, দণ্ডপ্রাপ্তরা অপ্রাপ্তবয়স্ক। ফলে শিশু আদালত আইনের আওতায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, তিন আসামিকে ধর্ষণ মামলায় দশ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তাদের মধ্যে আবার দুজনকে পর্নগ্রাফি আইনে আরও তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার প্রায় সাত মাসের মধ্যে আদালত এ রায় দিয়েছেন। গত ২৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

পটুয়াখালীর দুমকীতে জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে কলেজশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় ওই তিন কিশোরকে পৃথক আইনে সাজা দিয়েছে আদালত।

মামলার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাকে দুমকী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই কলেজশিক্ষার্থী। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ দুপুরে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অভিযুক্ত তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৭ এপ্রিল বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

রায় ঘোষণার পর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। আদালত যে ন্যায়বিচার দিয়েছেন, তা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা বয়ে আনবে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন বলেন, এই মামলার রায় সমাজের জন্য একটি বার্তা। কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, সে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম তালুকদার ও গাজী আল মামুন রায়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানান। তারা বলেন, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাধারণ মানুষ, নারী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর