বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর লাশ উত্তোলন
মানব কথা: ঢাকার সাভারের কবরস্থান থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর লাশ উত্তোলন করছে পুলিশ। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মারা গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন রয়েছে। এসবের অবসান করতেই আদালতের নির্দেশনায় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য লাশটি তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদরাসার কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা হয়।
সাভার মডেল থানা পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা এবং সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাশেদল ইসলাম নূরে উপস্থিতে এ কাজ শুরু হয়।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যু হয় হারিছ চৌধুরীর। কিন্তু তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপে তার মৃত্যু বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দাফনে বাধ্য করা হয়। সরকার ওই সময় তার প্রকৃত পরিচয় অনুযায়ী কোনো মৃত্যুসনদও দেয়নি। দাফন হওয়া ব্যক্তি হারিছ চৌধুরীর কিনা- বিভিন্ন বিতর্ক উঠলে তার মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী আদালতে হারিছ চৌধুরীর অবশিষ্ট (লাশ) যা আছে, তা তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করে প্রকৃত পরিচয় নির্ধারণ এবং তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানসহ সিলেটে দাফন করার প্রার্থনা জানিয়ে রিট করেন।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৫ সেপ্টম্বর বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর লাশ তুলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত পরিচয় শনাক্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচালককে নির্দেশ দেয়।
ওই সময় আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেলে বিভিন্ন বিতর্ক উঠে। কেউ বলেন, হারিছ চৌধুরী মারা যাননি, মারা গেছেন মাহমুদুর রহমান। দাফন করা ব্যক্তি যে আমার বাবা, তা সবার কাছে পরিষ্কার করার জন্য কোর্টে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমি চাই আমার বাবার শেষ ইচ্ছানুযায়ী সিলেটে তার লাশ যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হোক।’
সাভারের জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীনের প্রতিষ্ঠা অধ্যক্ষ মাওলানা আশিকুর রহমান কাশেমী পীর বলেন, ‘২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যখন হারিছ চৌধুরীর লাশ আমার মাদরাসায় দাফন হয়, তখন আমরা জানতাম না যে এটা হারিছ চৌধুরীর লাশ। আমার মাদরাসায় প্রফেসর মাহমুদুল হাসান নামে তাকে দাফন করা হয়েছে। তার জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব জায়গায় প্রফেসর মাহমুদুল হাসান ছিল। আমরা পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি যে দাফন করা ব্যক্তি হারিছ চৌধুরী।’
তিনি আরো বলেন, ‘যে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছ তা হলো তার শাশুড়ি অর্থাৎ শ্যালক জাফর ইকবাল মাসুমের মা ফলুর নেসার নামে। ওই সময় কবরে দাফন বাবদ ছদকায়ে জারিয়া হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান নেয়া হয়।’
লাশ উত্তোলনের সময় ঢাকা জেলা পুলিশ মোহাম্মদ মঈদ, সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।