পূর্তমন্ত্রনালয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদ কায়েমের হোতা সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে এখনো ধরা ছোয়ার বাহিরে

মানব কথা: ক্রিকেট বিশ্বে একটি কথা প্রচলিত আছে ডাবল ডব্লিউ ( WW) ওয়াকার এন্ড ওয়াসিম। তেমনি পূর্ত মন্ত্রনালয়েও ফ্যাসি বাদের স্বর্ন যুগে এক সফল জুটি ছিলো ডাবল এস (SS) শহিদুল্লাহ ও শওকতুল্লাহ। এদের মধ্যে সাবেক পূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার তিন দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সহ একাদিক্রমে সাড়ে ছয় বছর একই চেয়ারে বসে হরিলুট করে গেছেন। অপরজন গণপুর্ত অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, বর্তমানে উপসচিব মোহাম্মদ শওকতুল্লাহ। এই দুজন মিলে টেন্ডার বানিজ্য, নিয়োগ, পদোন্নতি, বাসা বরাদ্দ, প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ সিন্ডিকেট , আউট সোর্সিং বানিজ্য, বেনামে ঠিকাদারী, মিডিয়া সন্ত্রাস সহ এমন কোন অপরাধ নাই যে করেন নাই। দুই জন পূর্ত মন্ত্রনালয় সহ সমগ্র সিভিল প্রশাসনে এমন রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করেন নি। প্রধান প্রকৌশলী থেকে মন্ত্রী কেউ এই শওকতুল্লাহকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে টিকতে পারেনি। শওকতুল্লাহ কে শুধু দূর্নীতিবাজ বললে কম বলা হবে, তিনি আরো বেশি কিছু। পূর্ত প্রশাসনের সব জায়গায় তিনি অনুগত লোক বসিয়েছেন। নিজের আখের গুছাতে ও ভারতীয় হ্যাজিমনি কায়েম করতে নিয়েছেন অপ্রয়োজনীয় সব প্রকল্প।
জিয়ার স্মৃতি মুছতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন্দ্রিক স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মান প্রকল্পের নামে হরিলূটঃ ১৯৭৯ সালে ততকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৫ একর জায়গার উপর শিশুপার্ক নির্মান করেন। তখন থেকে পার্কটি শিশুদের নির্মল বিনোদনের কেন্দ্রস্থল হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু ১/১১ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার সর্বত্র জিয়াউর রহমানের অবদানকে মুছে ফেলতে কার্যক্রম গ্রহন করে। ভারতীয় প্রেসক্রিপসনে ইন্দিরা মঞ্চ তৈরীর জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মান নামে প্রকল্প গ্রহন করে। এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে স্বাধীনতা স্তম্ভ গ্লাস টাওয়ার, শিখা চিরন্তন, ভূগর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ইত্যাদি নির্মান শেষ হয়েছিল। তার পরেও জিয়ার স্মৃতি মুছতে একের পর এক তুঘলকী প্রকল্প বানাতে একই নামে তৃতীয় পর্যায়ে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মান (তৃতীয় পর্যায়) নামের এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসাবে, “১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর মাহান ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের উদাত্ত আহবান ও পাকিস্তানি হানাদার বাহীনির পরাজয় ও আত্মসমর্পনের দলিল স্বাক্ষরের উজ্জ্বলতম স্মৃতিকে সংরক্ষন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ও ঘটনাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তুলে ধরা। “ এই চেতনার বয়ান তুলে ধরেন। এই প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল দুইশত পয়ষট্টি কোটি চুয়াল্লিশ লক্ষত্রিশ হাজার টাকা (০৯/০১/২০১৮ খ্রিঃ তারিখে একনেক অনুমোদিত) । এর মধ্য পরিকল্পনা ছিল শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মান, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মান, ৭ ই মার্চ ভাষনের স্থানে মঞ্চ ও ভাস্কর্য নির্মান, ওয়াটার বডি ও ভূ-গর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির পার্কিং নির্মান। এর পর দফায় দফায় খরচ বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৩৯৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এই ভাস্কর্য ও ইন্দিরা মঞ্চের নকশা অনুমোদন হতো ঢাকাস্থ ইন্ডিয়া দুতাবাসের মাধ্যমে। ভারতীয় দূতাবাসের পছন্দেই শওকতুল্লাহ নগর গণপুর্ত বিভাগে একাদিক্রমে সাড়ে ছয় বছর নির্বাহী প্রকৌশলীর দ্বায়িত্বে ছিলেন। এর আগে দুই বছর একই বিভাগে দুই বছর উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর দ্বায়িত্ব পালন সহ মোট নয় বছর নগর গনপুর্ত বিভাগ কে নিজের বাপ দাদার তালুক বানিয়ে ফেলেছিলেন। জিয়ার স্মৃতি মুছতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার খালি করে এসব অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহনে পিছনে থেকে কল কাঠি নেড়েছেন এই শওকতুল্লাহ -শহীদুল্লাহ গং। ডিবিসি নিউজের শামীম আহমেদ; আমাদের সময় ডটকমের সমীরন রায় এর মতো সাংবাদিকদের পয়সা দিয়ে জিয়ার বিরুদ্ধে বিশোদগার করে নিউজ করাতেন শওকতুল্লাহ। কোন প্রকার সমীক্ষা ছাড়াই এ প্রকল্প গুলো নিয়ে জাতির কি লাভ হয়েছে তা উদ্ধার করা না গেলেও শওকতুল্লাহর ব্যাংক ব্যাল্যান্স যে বেড়েছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের এই প্রকল্পটিতে তিনি শহীদুল্লাহ খন্দকার; সাবেক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক; নির্বাহী প্রকৌশলী(প্রকল্প বিভাগ২) আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ জুবায়ের; আওয়ামী ফ্যাসীবাদের ফেরিওয়ালা ইতিহাসবিদ মুন্তাসির মামুন; মুরগী কবির খ্যাত শাহারিয়ার কবির সহ ২০১৮ সালে তুরস্কে সরকারি সফর করেছেন। বিজনেস ক্লাসে সরকারি সফর করে তারা জাতির জন্য কি বিশেষজ্ঞান অর্জন করে নিয়ে এসেছেন তা জানার অধিকার আমাদের রয়েছে।
নিজের আখের গুছাতে নিয়েছেন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পঃ রাজধানীর মিন্টোরোডে ২০১৬ সালে মন্ত্রীদের জন্য ৩৮৫০ বর্গফুটের ২টি ২০ তলা টাওয়ার ভবন নির্মানের পায়তারা করেন এই শওকতুল্লাহ। কিন্তু একনেকে উচ্চতা কমিয়ে প্রকল্পটি পাস হয়। কিন্তু বাস্তবে কোন মন্ত্রীই এসব এপার্ট্মেন্টে বসবাস করেন না। বাস করেন তাদের কর্মচারী, কয়েকটিতে বাস করেন আমলারা। একই ভাবে ইস্কাটনে সচিব নিবাস প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। যেখানে সচিব পদমর্যাদার নন এমন অনেক কর্মকর্তা বসবাস করছেন। এসব প্রকপ্লেও করা হয়নি সমীক্ষা প্রতিবেদন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অফিস নির্মান প্রকল্প ও এমনই একটি প্রকল্প। বিশাল এই অট্টালিকার অর্ধেকেরও বেশি খালি পড়ে আছে। যথারীতি তার সব প্রকপ্লের ঠিকাদারই জিকে বিল্ডার্সের শামীম। জিকে শামীম গ্রেফতার হলে প্রকল্প গুলো মুখ থুবরে পড়ে। তাছাড়া রমনা পার্ক ও অফিসার্স ক্লাবে উন্নয়ন প্রকল্প চালু থাকলেও বছর বছর মেরামতের নামে রাজস্ব খাতে শত কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। লাল বাগে অবস্থিত কেন্দ্রীয় কারাগার, যা বর্তমানে পরিত্যক্ত সেখানে মুজিব বন্দনার জন্য জাদুঘর বানিয়ে হাজার কোটি টাকা জলাঞ্জলি দেয়ার প্রকল্পটির এমন আরেকটি প্রকল্প। এই জাদুঘরে কে টিকেট কেটে দেখতে আসবে? কোন বিদেশী পর্যটক কি আসবেন? দেশ ও জাতি এটা থেকে কিভাবে লাভবান হবে তা আমাদের প্রশ্ন।
ডিপিপি পাসের পর ইচ্ছে হলে ছিনিয়ে নিতেন অন্য যেকোন ডিভিশনের কাজ। টেন্ডার বানিজ্যের মজা পেয়ে জিকে বিল্ডার্স, ঢাকা জোনের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এর সাথে মিলে এ কাজ করতেন। যাদের কাজ ছিনিয়ে নিতেন সেসব ডিভিশনের কর্মকর্তাগন চোখের জল ফেলা ছাড়া টু শব্দটি করার সাহস পেতেন না।
মেরামত রক্ষনাবেক্ষনের নামে শত কোটি টাকা বিদেশে লোপাটঃ রাজধানীর মিণ্টোরোডে মোট ১২ টি বাংলো রয়েছে। এছাড়া প্রধান বিচার পতির বাসভবন সহ হেয়ার রোডে কয়েকটি বাংলোতে মূলত নগর গণপূর্ত বিভাগ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করে থাকে। এছাড়া অফিসার্স ক্লাব, শিক্ষা মন্ত্রনালয় কোয়ার্টার ও মিরপুরের কয়েকটি ন্যাম ফ্ল্যাটে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়। নগর গনপূর্ত বিভাগ এর এপিপি তে বিগত ৯ বছরে গড়ে এপিপি থেকে ৩০ কোটি এবং থোক বরাদ্দসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা মেরামত খাতে ব্যয় হয়েছে। তার ৯ বছরের কার্যকালে এই ২৯ টি বাংলোর মেরামতে বছরে গড়ে ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে অর্থাৎ মোট ২৭০ কোটি টাকা মেরামত খাতে ব্যয় হয়েছে। অথচ এই টাকা দিয়ে দোতলা এই উনত্রিশ টি বাড়ি কয়েকবার নির্মান করা যায়।
গোপালগঞ্জের ঠিকাদার দীন ইসলাম এর উত্থানঃ তার হাত ধরেই এস এ এন্টারপ্রাইজের মালিক দীন ইসলামের উত্থান। এই দীন ইসলাম ২০১১ সালেও কোন ঠিকাদার ছিলেন না, কিন্তু রাতারাতি সিটি ডিভিশনে কাজ করে তার টার্ণওভার বাংলাদেশে ২য় হয়ে উঠে। নো বডি থেকে তিনি হয়ে উঠেন বিগ ডেডি। ফলে উন্নয়ন কাজের দরপত্রে জয়েন ভেঞ্চারের ক্ষেত্রে দীন ইসলামের এস এ এন্টারপ্রাইজ হয়ে উঠে এক অপরিহার্য নাম। এই দীন ইসলাম এর বাড়ি গোপালগঞ্জ । তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর ২০০৩-০৪ শিক্ষা বর্ষে পলিটিকেল সাইন্স এর ছাত্র। ছাত্র জীবনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরে কাউসার মোল্লার ছত্র ছায়ায় টেন্ডার সিন্ডিকেটে জডিয়ে পরেন এবং পরে ঢাকা মহানগর দক্ষিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ লাভ করেন। দীন ইসলাম নগর গনপূর্ত বিভাগে একচাটিয়া সকল কাজ করেন। অন্য যেকোন ঠিকাদার কে দিন ইসলামের লাইসেন্সে কাজ করতে বাধ্য থাকতেন। আউট সোর্সিং এর সকল কর্মচারি তার প্রতিষ্ঠান ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের দেয়া হতো। দীন ইসলাম ছিলেন শহীদুল্লাহ খন্দকারের আস্থাভাজন ও আওয়ামীলীগের ডোনার। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির দিনে আওয়ামীলীগের তথা কথিত শান্তি সমাবেশের নামে গুন্ডাতন্ত্র কায়েমে অর্থ ও জনবল নিয়ে সক্রিয় ভূমিকায় থাকতেন এই দীন ইসলাম। জুলাই গণ অভ্যূত্থানে ছাত্র জনতা হত্যায় দীন ইসলাম বাহিনী অর্থ ও জনবল সহ প্রত্যক্ষ ভাবে ছাত্র হত্যায় জড়িত ছিল।
২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে বিসিএস পাবলিক ওয়ার্কস ইঞ্জিনিয়ারস এসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হওয়াঃ এই নির্বাচনে পূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তিনি তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন, সার্কেল ৩ এর ত্বত্তাবধায়ক প্রকৌশলী রোকনউদ্দিন, সার্কেল ৪ এর ত্বত্তাবধায়ক প্রকৌশলী উজির আলী, ই এম এর নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরন মিস্ত্রীর মাধ্যমে ঢাকায় পোস্টিং পাওয়া সকল অফিসারকে পোস্টিং টিকাতে হলে শওকতুল্লাহকে পাস করাতে হবে এরূপ হুমকি প্রদান করেন। ফলে ঐ নির্বাচনে শওকতুল্লাহ একা বাকি চার প্রার্থীর মোট ভোটের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ভূমি ধ্বস বিজয় লাভ করে। ঠিক যেমন আওয়ামীলীগ ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে ভূমি ধ্বস বিজয় লাভ করেছিল। এমন কি তিনি ইলেকশনের একেবারে শেষ দিকে নির্বাচন কমিশন সহ সকল অফিসারদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে পুলিশ লীগের বিপ্লব কুমার সরকার কে পূর্ত ভবন চত্তরে নিয়ে আসেন। বিপ্লব কুমার সরকারের সাথে ঢলাঢলি করে তিনি কত ক্ষমতাবান তা জাহির করে ব্যপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।
ছাত্রলীগ কানেকশন ও শওকতুল্লাহর উত্থানের কাহিনীঃ শওকতুল্লাহ চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আজম নাছিরের আত্মীয়। তিনি উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। পরবর্তিতে চুয়েট ছাত্রলীগের ক্যডার ছিলেন। ২৪ তম বিসিএস এ গণপূর্ত ( সিভিল) ক্যাডারে যোগদানের পর থেকে তিনি স্বভাব সূলভ ভাবে দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন । সরকারি চাকুরিকে সেবা প্রদানের বদলে ঘুষ খাওয়ার লাইসেন্স মনে করেন। প্রথমে চট্টগ্রামে পোষ্টিং থকলেও পরে ২০০৯ সালে তার ক্যারিয়ারের পালে হাও্য়া লাগে। চট্টগ্রামের এক একাউন্টস ক্লার্ক কে দালাল হিসাবে ধরে প্রথমে ঢাকায় পোষ্টিং বাগিয়ে নেন। পরে চট্টগ্রামের সংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ পূর্তমন্ত্রী হলে তার পোয়া বারো হয়। সেই মন্ত্রীর পি,ও নূর খান, এর ভাগ্নিজামাই পরিচয়ে অধিদপ্তরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। নূর খান পরে মন্ত্রীর এপিএস হলে তিনি গোটা মন্ত্রনালয় ই কব্জা করে নেন। সেই সময়েই মন্ত্রী মোশারফ এর সাথে টাকা পয়সা ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরে সচিব মইন আব্দুল্লাহকে সরিয়ে দেন। নতুন পূর্ত সচিব হন শহীদুল্লাহ খন্দকার। শহীদুল্লাহ খন্দকার কে বাসর রাতে বিড়াল মারার মতো করে নাক পর্যন্ত ডলারের নিচে ছুবিয়ে রাখেন শওকতুল্লাহ। ফলে যে কোন ইস্যুতে তাকে ডিঙ্গিয়ে কেউ শহীদুল্লাহ খন্দকারের কাছে যেতে পারতেন না। সাবেক চীফ ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান মুন্সিকে পেনশন সুবিধা ব্যতিরেকে পি,আর, এল এর তারিখের দুই দিন আগে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; আশরাফুল আলমের এক বছরের মাথায় প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার থেকে অপসারন; মন্ত্রী শ,ম, রেজাউল করিম কে সরে যেতে বাধ্য করা সবই হয়েছে এই শহীদুল্লাহ-শওকতুল্লাহ জুটির বদলী বানিজ্যে বাধ সাধার কারনে। এই জুটিই প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে ঠুটো জগন্নাথ বানিয়ে রেখেছিল।
প্রভাব খাটিয়ে সরকারি সুবিধা আদায়ঃ তিনি নিজে মন্ত্রী (ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ) কোটায় লাল মাটিয়ায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট পেয়েছেন। অর্থের বিনিময়ে তার অনুসারি কয়েক জনকে মন্ত্রীর কোটায় ফ্ল্যাট পাইয়ে দিয়েছেন। শওকতুল্লাহ্র বদান্যতায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের যারা মন্ত্রী কোটায় ফ্ল্যাট পেয়েছেন তারা হলেন ২৪ তম বিসিএস এর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ যুবায়ের, স্বর্নেন্দু শেখর মন্ডল, আব্দুল্লাহ নূর, ২৭ তম বিসিএস এর আজমূল হক মূন, ২৮ তম বিসিএস এর মিজানুর রহমান। তিনি উত্তরায় শশুরের নামে রাজুকের দুইটি প্লট নিয়েছেন। পূর্বাচলে নিজের নামে ও স্ত্রীর নামে প্লট নিয়েছেন। জাগৃকের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ফ্ল্যাট নিয়েছেন। শহীদুল্লাহ র ছেলে সৌরভের মাধ্যমে ও অন্যান্য লিঙ্কে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। তার কাছে কম পক্ষে ১০ কোটি ডলার রয়েছে। তিনি কখনো বাংলাদেশী টাকায় ঘুষ লেনদেন করেন নি , সব সময় ডলার নিতেন। তিনি সরকারি খরচে কয়েকবার আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, যুক্ররাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চায়না, তুরস্ক, সাউথ আফ্রিকা, মেক্সিকো, পেরু, পাকিস্তান, ভারত, জর্ডান, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, নরডিক ও বলকান দেশ সমূহে হাই প্রোফাইল ভিজিট করেছেন। তাছাড়া তিনি ঢায় সরকারি বাসা বরাদ্দ নিয়েছেন, আবার একই সময়ে চট্টগ্রামে সরকারি কলোনিতে তার স্ত্রী বসবাস করতেন। চট্টগ্রামের ঐ বাসায় তিনি ভাড়া দিতেন না। তার স্তী চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের ফ্যাকাল্টি হওয়ায় সব সময় চট্টগ্রামে থাকেন।
দুদক ও মিডিয়া ম্যানেজঃ ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় তিনি দুদক ও মিডিয়াকে খুব ভালোভাবে ম্যানেজ করে গেছেন। আওয়ামীলীগের হালুয়া রূটি মীডিয়াকে তিনি নিয়মিত মসোহারা দিতেন। অনেক সাংবাদিক কে বেনামে ঠিকাদারির কাজ দিতেন, কাউকে সরকারি প্লট / ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেজন্য এত দূর্নীতির এই বর পূত্রের বিরুদ্ধে মিডিয়া তখন খুব একটা কলম ধরেনি। মাত্র একবারই, ক্যাসিনো কান্ডে সম্রাট -জিকে শামীম গ্রেফতার হলে তার নাম টেন্ডারের মাফিয়া সিণ্ডিকেটের সাথে প্রকাশ্যে আসে। সে সময় দুদক তাকে ডাকলেও তৎকালীন চ্যায়ারম্যান অবসর গ্রহনের আগের দিন তাকে দায়মুক্তি দিয়ে যান। এখনো তার প্রিয় মোতাহার স্যার দুদকে মহাপরিচালক হিসাবে আছেন। এই মোতাহার হোসেন পূর্ত মন্ত্রনালয়ে যুগ্ম সচিব ছিলেন। শহীদুল্লাহ খন্দকারের আস্থা ভাজন হওয়ায় অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানম এর পিএস হিসাবে পদায়ন ও ৫ আগষ্টের পরে আত্মগোপনঃ শওকতুল্লাহ ২০২১ সালে ডিএস পুলে চলে যান। উপসচিব হিসাবে তার প্রথম পোস্টিং হয় অর্থ মন্ত্রনালয়ে। ২০২৪ এর ডামি নির্বাচনের মন্ত্রী সভায় ওয়াসিকা আয়েশা খানম,অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পেলে তিনি তার পিএস হিসাবে নিয়োগ পান। জানুয়ারি থেকে আগষ্ট এই সময়ে ব্যাপক লূটপাট ও তদবির বানিজ্য করেন। ৫ আগষ্টে ,২০২৪ হাসিনা পালিয়ে গেলে তিনি আত্ম গোপনে চলে যান। মাস খানেক অফিস করেন নি কারো ফোন ধরেন নি। এখন আবার সুযোগ বুঝে ফেরত এসে অফিস করছেন। অথচ অননুমোদিত ছুটির কোন অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আনা হয়নি। এরকম একজন দলবাজ মাফিয়া যদি পার পেয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশ +২ তে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবেনা। দূর্নীতি, অর্থ পাচার, মাফিয়া তন্ত্র কায়েম সর্বোপরি জুলাই গনহত্যায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহ্নের দায়ে তার গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে তার স্ত্রী-পুত্র, শ্বশুর’ বাবা-মা;ভাই-বোন ও তার নিজের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এখন সময়ের দাবি।