সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠক

সময়: 11:06 am - July 9, 2025 |

মানব কথা: সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) জেদ্দায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান। ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের পর এটাই উপসাগরীয় অঞ্চলের কোন দেশে শীর্ষ ইরানি কূটনীতিকের প্রথম সফর।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাঈ জানিয়েছে গতকাল মঙ্গলবার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে আব্বাস আরাঘচি ও সৌদি কর্মকর্তাদের আলোচনা ছিল ‘ফলপ্রসূ’।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের তীব্র সংঘাতের পর এই সফর হলো। ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় এবং পরে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করে। তা সত্ত্বেও তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়াটি থেমে থাকেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, আরাঘচি ও যুবরাজ মোহাম্মদ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা করেছেন এবং সর্বশেষ আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এসপিএ আরও জানিয়েছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে সহায়তা করবে বলে সৌদি আরব আশা করছে। বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কূটনৈতিক সংলাপের পথকেই সমর্থন করে সৌদি আরব।’

আরাঘচি সৌদি আরবকে ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করার জন্য ধন্যবাদ জানান। এই ইরানি কূটনীতিক সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।

এর আগে, গত ১৩ জুন কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ইসরায়েল ইরানের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। জবাবে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার ফলে ইসরায়েলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে।

পরে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালে, তেহরান কাতারে একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এর কিছুক্ষণ পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। যুদ্ধবিরতির সময় বেশ কয়েকটি আরব দেশ কাতারের ওপর হামলাকে দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা করে। তবে এসব ঘটনার মধ্যেও ইরান উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সচেষ্ট রয়েছে।

ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক বহু বছর ধরেই টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাত ও একে অপরের বিরুদ্ধে অস্থিতিশীলতা ছড়ানোর অভিযোগ ছিল প্রধান কারণ। তবে ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্মত হয় এবং তখন থেকেই শীর্ষ পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।

সাম্প্রতিক যুদ্ধ শুরুর আগে সৌদি আরব বলেছিল, তারা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনা সমর্থন করে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা দেখছে ইতিবাচকভাবে। সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে বিরোধের সমাধান সম্ভব, তবে নিজের দেশের ওপর হামলার কারণে এখন পারস্পরিক বিশ্বাস বড় চ্যালেঞ্জ।

মঙ্গলবার ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে আরাঘচি বলেন, ইসরায়েল আলোচনার চেয়ে সংঘাতকে বেশি পছন্দ করে। তিনি লিখেন, ‘ইরান এখনো কূটনীতিতে আগ্রহী, তবে আবারও আলোচনায় বসার বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদি কেউ চায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে সুষম সমঝোতার জন্য আন্তরিক প্রস্তুতি দেখাতে হবে।’

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর