যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ
মানব কথা: আজ ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির মসনদ আগামী চার বছর কে সামলাবেন তা নির্ধারিত হবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতিসহ বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণে কে প্রভাব বিস্তার করবে এ নিয়ে বিশ্ববাসীর নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে লড়তে যাচ্ছেন কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান দল থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মূল ভূমিকা পালন করবে। কারণ এগুলোতে ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করা কঠিন, রাজ্যগুলোতে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান প্রার্থীদের সমর্থন প্রায় সমান। তাই দোদুল্যমান এই অঙ্গরাজ্যগুলোর দিকেই নজর সকলের। এমনকি দুই প্রার্থীও এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের দিকে তাকিয়ে আছেন।
এর মধ্যে রবিবার (৩ নভেম্বর) মিশিগানে প্রচারণার সময় গাজায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমলা হ্যারিস। আরব আমেরিকানদের ভোটারদের সমর্থন পেতেই এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কমলা বলেন, গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসের মাত্রা এবং লেবাননে বেসামরিক হতাহত ও বাস্তুচ্যুত পরিস্থিতির কারণে এ বছরটি কঠিন ছিল। ক্ষমতায় এলে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও ইসরাইলের নিরাপত্তার কথাও উঠে আসে কমলার বক্তব্যে।
একই দিন পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনায় প্রচারণায় অংশ নেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। জো বাইডেনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ব্যর্থতার জন্য ডেমোক্র্যাটদের লজ্জিত হওয়া উচিত। রিপাবলিকান পার্টি জিতলে আগামী চার বছর স্বর্ণযুগে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনে জিতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন মার্কিন নীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আসবেনা। রিপাবলিকানরা জিতলে হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি একটু কঠিন হবে যা ডেমোক্রেটদের সময়ে তুলনামূলক সহজ।
এবার মার্কিন নির্বাচনে মুসলিম আমেরিকানদের ভোট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ মুসলিম ভোট রয়েছে সুইং স্টেটগুলোতে। তাই মুসলিম ভোটাররা এবার কোন পক্ষ নেবেন- এ প্রশ্নটি বেশ কয়েকদিন ধরে বেশ জোরালোভাবেই আলোচিত হচ্ছ।
সংখ্যার বিচারে মুসলমানরা মার্কিন জনসংখ্যার খুব বেশি নয়। মাত্র এক শতাংশ। কিন্তু মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতে মুসলিম ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। আর এই বছরের মুসলিম ভোটের ক্ষেত্রে একটাই ইস্যু- গাজা যুদ্ধ।
গাজার নির্মম ভয়ংকর যুদ্ধে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের ভূমিকায় আমেরিকান মুসলমানরা হতাশ। ফিলিস্তিনিদের অমানবিক দুর্দশার জন্য ডেমোক্র্যাটদের প্রতি তাদের ঘৃণা আছে। তারা ভোলেননি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা। ৯/১১ পরবর্তী সময়ে রিপাবলিকানদের ইসলামফোবিয়া অব্যাহত রাখার কথাও তাদের ভোলার কথা নয়। আমেরিকান মুসলিমরা তাহলে কী করবেন?
মুসলিম ভোটাররা কি দুই খারাপের মধ্যে কম খারাপটাকেই বেছে নেবেন? নাকি এই ভোট থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখবেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে ভোটের মাঠেই।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই দেশটিতে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এবারের নির্বাচনে ইতিমধ্যেই ৮ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। আর আজ ৫ নভেম্বর নির্বাচনের দিন দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সশরীরে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
সশরীরে ভোটদানের সুযোগের পাশাপাশি বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগেও ভোটের ব্যবস্থা থাকে। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা মূলত চিঠির মাধ্যমে পূরণকৃত ব্যালট পেপার পাঠাতে পারেন অথবা কোনো সুনির্দিষ্ট ড্রপ-অফ স্থানে তা জমা দিয়ে যেতে পারেন।
প্রতিটি অঙ্গরাজ্য নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় ভোট গণনা। তবে সাধারণত অঙ্গরাজ্য ভেদে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোট গণনা শুরু হতে পারে। মূলত সময়ের ব্যবধানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গণনার সময়ে পার্থক্য দেখা যায়। যেসব অঙ্গরাজ্যের ভোট দ্রুত গণনা হয়, সেসব স্টেটের ফল রাতেই পাওয়া যেতে পারে।
তবে ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল গোষণায় কয়েকদিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। যেহেতু বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ব্যালট গণনা ও চিঠির মাধ্যমে আসা ভোট গণনা করার প্রয়োজন হবে তাই এসব অঙ্গরাজ্যে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ বেশ সময়সাপেক্ষ।
২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে বেশ কয়েক দিন লেগে গিয়েছিল। এবারও এমনটা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ নতুন প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বিজয়ীদের নাম জানতে ৫ নভেম্বরের বেশ কয়েকদিন পর পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।