দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি

সময়: 7:17 am - December 10, 2024 |

মানব কথা: হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সমর্থনে সিভিল সোসাইটি অব দিল্লি’র ব্যানারে ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে দিল্লির চাণক্যপুরী থানা থেকে পদযাত্রা করে বাংলাদেশ হাইকমিশন অভিমুখে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

বিবিসি বাংলা’র সংবাদদাতা জানিয়েছেন, অন্তত গত এক যুগে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ভারতীয়দের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। এই বিক্ষোভ ‘বহু বহু বছরের মধ্যে প্রথমবার’।

এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আরএসএস নেতা রজনিশ জিন্দাল, ভারতের সাবেক ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো চিফ রাজীব জৈন, ঢাকাতে সাবেক রাষ্ট্রদূত ভিনা সিক্রিও থাকবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং দু’প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারে ‘সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা’য় আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের সাথে এক বৈঠকে এ কথা জানান তিনি।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই। আমরা এটাকে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হিসেবে দেখি।’

পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে আলোচনায় বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই।’

প্রায় ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে সংখ্যালঘু ইস্যু, অপতথ্য প্রচার, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বর্তমান সরকারের সাথে কাজ করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে ‘খুবই দৃঢ়’ এবং ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে কিছু মেঘ জমে ছায়া তৈরি করেছে। এই ‘কালো মেঘ’ মুছে ফেলতে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।

আলোচনায় বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও উঠে আসে।

বিগত ১৫ বছরের নির্মম ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসনের বর্ণনা করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের লোকজন উদ্বিগ্ন কারণ তিনি সেখান (ভারত) থেকে অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।’

বিক্রম মিশ্রি জানান, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় প্রতি ঘণ্টায় তিনি বাংলাদেশের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতা কিভাবে এক হয়ে হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলের অবসান ঘটিয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো তরুণদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ।’ এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে সেসবের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর যেসকল বিদেশী নেতা তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনের সারিতে আছেন।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের বয়ান এবং ভারত সরকারের ধারণা ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনার সাফল্য কামনা করি।’

‘বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে এমন ধারণা ভুল’-উল্লেখ করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের সাথে নয়, বরং সকলের সাথে।’

বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনায় ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভারতকে তার উদ্যোগে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ নতুন ভবিষ্যত গড়তে চাই।’

বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত সার্কের সাথে কাজ অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু বাধা রয়েছে।

সংখ্যালঘু ইস্যু সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি পরিবার। আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।’

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত গত মাসে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং আগামী দিনে এই সংখ্যা আরো বাড়াবে।

‘আমরা আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই,’ বলেন তিনি।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর