বেতনের বিপরীতে বিশেষ ঋণ পাবেন চাকরিজীবীরা
মানব কথা: দেশের প্রথম প্রজন্মের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবি ব্যাংক চাকরিজীবীদের বেতনের বিপরীতে বিশেষ ঋণ সেবা চালু করেছে। শতকরা ১৩ শতাংশ সুদে বেতনের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন চাকরিজীবীরা। তবে ব্যবসায়ীদের জন্য এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। যেকোনো ব্যাংকের বাণিজ্যিক মাধ্যমে বেতন হয় এমন চাকরিজীবীরা এবি ব্যাংকের এ ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ব্যাংকটির নতুন অ্যাপ ‘এবি ডিরেক্ট’সহ মোট চারটি সেবা উদ্বোধন করা হয়। ব্যাংকটির পরিচালক ফজলুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সৈয়দ মিজানুর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকের পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, এবি ব্যাংক অনেক প্রডাক্ট বাজারে আনছে। সামনের দিনগুলোতে আরো সহজ এবং নির্ভরযোগ্য ডিজিটাল প্রডাক্ট চালু করা উচিত। তারিক আফজাল এখন এবি ব্যাংকে নেই। তাই এই ব্যাংকটিকে এগিয়ে নিতে বর্তমানে যারা আছেন তাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। আমরা অতীতের দিকে তাকাতে চাই না। সামনে যত ভালো করা যায় সেটি দেখার বিষয়।
ভারগ্রাপ্ত এমডি জানান, নতুন কয়েকটি সেবা যুক্ত করে চালু হওয়া ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপের নাম দেয়া হয়েছে ‘এবি ডিরেক্ট’। এ ছাড়াও এবি ইলহাম, এবি আমানী, কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম (কেডিএস) ও এবি স্বাচ্ছন্দ্য নামে চারটি নতুন ব্যাংকিং প্রোডাক্ট গ্রাহকদের জন্য চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয, এবি ডিরেক্ট ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসে আধুনিক সব ব্যাংকিং সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক মুদারাবা ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট ‘এবি ইলহাম’ দিচ্ছে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিককে আকর্ষণীয় মুনাফা লাভের সুযোগ। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক অ্যাকাউন্ট ‘এবি আমানী’ নারী গ্রাহকদের জন্য বিশেষ একটি সঞ্চয়ী হিসাব, যেখানে রয়েছে ইন্স্যুরেন্সসহ আরো বিশেষ কিছু সুবিধা। মাসিক সঞ্চয়ের ভিত্তিতে যেকোনো আমানতকারীকে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে এসেছে এবি কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।
অপর দিকে ‘এবি স্বাচ্ছন্দ্য’ একটি চলতি হিসাব যেখানে গ্রাহকরা ইন্টারেস্ট পাবেন। এ ছাড়াও এই অ্যাকাউন্টে চাকরিজীবীদের জন্য ওভারড্রাফট সুবিধা রয়েছে। অনেকটা ক্রেডিট কার্ডের আদলে তৈরি ব্যাংকিং খাতে এটিই প্রথম উদ্যোগ যা চাকরিজীবীদের ক্ষুদ্র ঋণে সহায়তা করবে। ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় এর সুদ অর্ধেকেরও কম।
‘এবি স্বাচ্ছন্দ্য’ সেবাটি ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরিজীবীরা নিতে পারবেন। বেতনের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে। তবে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। অর্থাৎ কারো বেতনের ৬০ শতাংশ যদি পাঁচ লাখ টাকার বেশি হয় তাহলে তিনি পাঁচ লাখের বেশি ঋণ পাবেন না। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে শতকরা ১৩ ভাগ। এ সুবিধা পেতে একটি চলতি হিসাব খুলতে হবে। ন্যূনতম এক হাজার টাকা জমা দিয়ে হিসাবটি খুলতে পারবেন গ্রাহকরা। তবে প্রাথমিক জমা ২৫ হাজার টাকা হলে এক বছরের জন্য ডেবিট কার্ড ও এসএমএস সার্ভিস বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। ডেবিট কার্ডটি হবে ডুয়াল কারেন্সির।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, বেসরকারি খাতে দেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবে এবি ব্যাংকের অনেক অবদান রয়েছে। ব্যাংকটি শুরু থেকই গ্রাহকের সেবার জন্য নিবেদিত। দেশের কিছু ব্যাংকে গ্রাহক টাকা না পেলেও এবি ব্যাংকের ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক টাকা চেয়ে পায়নি এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। সামনেও ঘটার সুযোগ নেই। বরং খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্মকর্তারা বদ্ধপরিকর। খেলাপি কমাতে সবধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খেলাপি আদায় করতে ঋণগ্রহীতাদের ঘরবাড়ি এবং অফিসে হানা দিচ্ছে। ঋণ আদায়ে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। চলতি ডিসেম্বর প্রান্তিক এবং আগামী মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি গ্রহণেযোগ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি ব্যাংকটির সামগ্রিক উন্নতি প্রতি প্রান্তিকে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হবে।
ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, এবি ব্যাংকের শুরু থেকে সবসময় সার্ভিস ভালো ছিল। অনাস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ব্যাংক খাত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবি ব্যাংকও বর্তমানে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। তবে নতুন ব্যাংকিং সেবা চ্যালেঞ্জ কমাতে সহায়তা করবে। তবে এ জন্য সময় লাগবে।
এবি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর জেড এম বাবর খান বলেন, আমরা সবসময় গ্রাহকদের পাশে পেয়েছি। আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রেগুলেটরি বডির দিকনির্দেশনা পেয়েছি। বিশেষ করে ঋণ অনাদায়ের তিন মাস পার হলে খেলাপি করার বিষয়টি একটি ভালো উদ্যোগ।
ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এতদিন যা কিছু হয়েছে আমরা সে দিকে তাকাতে চাই না। এখন থেকে আমরা স্বচ্ছ থাকতে চাই। কোনো লুকোচুরি থাকবে না। সাংবাদিকরা সব তথ্য পাবেন। আমরা ঘুরে দাঁড়াব। আমরা গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে সক্ষম। আশা করি, গ্রাহক আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন। আমরাও তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে কাজ করছি। ব্যাংকের সব সূচকে উন্নতি করতে আমরা একযোগে নতুন উদ্যমে কাজ করব।