নাগরিক টিভির প্রতিনিধি ছাত্রলীগ নেতা চাঁদাবাজ রুবেল , কুমিল্লা জুড়ে সমালোচনার ঝড়

সময়: 11:33 am - September 2, 2025 |

কুমিল্লা প্রতিনিধি
নিষিদ্ধ ঘোষিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহারের প্রভাবশালী এপিএস হিসেবে পরিচিত রুবেল মজুমদারকে নিয়ে কুমিল্লার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। সম্প্রতি তিনি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল নাগরিক টিভির জেলা প্রতিনিধি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন আমলে তিনি কেবল ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে প্রভাব খাটাননি, বরং এমপির ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে বিভিন্ন দপ্তর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও নিয়মিত মাসোহারা আদায় করতেন। ফ্যাসিস্ট শাসনামল শেষে তিনি কিছুদিন আড়ালে থাকলেও বর্তমানে সাংবাদিক পরিচয় নিয়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে স্থানীয় মহলে আলোচনা চলছে।

রুবেল মজুমদার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। রাজনৈতিক পরিচয়ের সুযোগে তিনি সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহারের এপিএস হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সময়ে তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।

২৪ জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগেও তার নাম ওঠে আসে। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, বাহারের ঘনিষ্ঠ ছাত্রলীগ কর্মীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রুবেল।
সাম্প্রতিক সময়ে রুবেল মজুমদার নাগরিক টিভির কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই তিনি আবারও আলোচনায় আসেন। স্থানীয় সাংবাদিক মহলের অনেকেই বিষয়টিকে সাংবাদিকতার মর্যাদাহানিকর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

কুমিল্লা প্রেসক্লাবের এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যিনি অতীতে রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, সেই ব্যক্তি এখন সাংবাদিক পরিচয়ে মাঠে নামলে সমাজে ভুল বার্তা যাবে। সাংবাদিকতা হচ্ছে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা, এখানে বিতর্কিত চরিত্রের অনুপ্রবেশ অশুভ।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রুবেল মজুমদার কেবল ব্যবসায়ী বা বড় প্রতিষ্ঠানের কাছেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকদের কাছেও তার চাঁদাবাজি পৌঁছেছিল।
একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিযোগ করেন, “তিনি হঠাৎ পরিদর্শনে এসে জিজ্ঞেস করতেন—কে দেরি করে এসেছেন। তারপর নানা অজুহাতে চাঁদা দাবি করতেন। না দিলে হুমকি দিতেন।”

তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে সরাসরি রুবেল মজুমদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লা জেলায় কর্মরত একাধিক সাংবাদিক মনে করেন, রুবেল মজুমদারের সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ স্থানীয় গণমাধ্যমের জন্য নেতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে। ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “এমন বিতর্কিত অতীতের ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে কিভাবে অনুমোদিত হলেন?”
এক সিনিয়র সাংবাদিকের ভাষায়, “এটি গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করবে। যদি কেউ সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে, তাহলে পুরো পেশাটিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”

সাবেক ক্ষমতাসীন দলের সময়কার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকা রুবেল মজুমদারের বর্তমান কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিএনপি ও এনসিপির নেতারা বলছেন, “যে ছাত্রলীগ নেতা অতীতে ক্ষমতার দাপটে সাধারণ মানুষকে জুলুম করেছে, আজ সে সাংবাদিক পরিচয়ে আবার একই কাজ করছে। এটি গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতার জন্য অশনিসংকেত।
জেলা ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতা জানান, নিদিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পূর্ণবাসন করতে এক শ্রেনীর মিডিয়ার দালাদ কাজ শুরু করছে। আমরা ছাত্রলীগ নামদারী এসব কথিত সাংবাদিকবদের মাঠে নামলে প্রতিরোধ করবো।
এদিকে রুবেল মজুমদারের অতীত কর্মকাণ্ড ও বর্তমান পরিচিতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় থামছেই না। কুমিল্লার সাধারণ মানুষও এ বিষয়ে সোচ্চার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন, “যে মানুষ ছাত্রলীগের নামে নানা অপকর্ম করেছে, সে এখন সাংবাদিক হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে?”

রুবেল মজুমদারের অতীত রাজনৈতিক পরিচয় ও বর্তমান সাংবাদিকতার দাবিকে ঘিরে কুমিল্লায় তীব্র সমালোচনা চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হোক বা না হোক, তার অতীতের কর্মকাণ্ডই এখনো জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। সাংবাদিকতা যে আস্থা ও বিশ্বাসের পেশা—এখানে বিতর্কিত চরিত্রের অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলা অস্বাভাবিক নয়।

রুবেল মুজুমদারের চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের ডকুমেন্টসহ আরো বিস্তারিত আসছে আগামী পর্বে।

Share Now

এই বিভাগের আরও খবর