ট্রাম্প প্রশাসনকে ৫ লাখ অভিবাসীর বৈধ মর্যাদা বাতিলের অনুমতি আদালতের

মানব কথা: সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চালু করা দুই বছরের ‘হিউম্যানিটারিয়ান প্যারোল’ প্রোগ্রামের আওতায় কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা পাঁচ লাখ ৩২ হাজার অভিবাসী এখন দেশত্যাগ বা বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়লেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া অভিবাসন নীতিকে বড় ধরনের সহায়তা দিয়েছে। আদালত এক রায়ে প্রশাসনকে চারটি ক্যারিবীয় ও ল্যাটিন আমেরিকান দেশের পাঁচ লাখের বেশি অভিবাসীর আইনি মর্যাদা বাতিলের অনুমোদন দিয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, এর ফলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চালু করা দুই বছরের ‘হিউম্যানিটারিয়ান প্যারোল’ প্রোগ্রামের আওতায় কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা পাঁচ লাখ ৩২ হাজার অভিবাসী এখন দেশত্যাগ বা বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়লেন।
সুপ্রিম কোর্টের এ সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষ আদালতের সমর্থন পাওয়া, যেখানে তিনি তার নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার’ বাস্তবায়নে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আদালতের এ রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুইজন উদারপন্থী বিচারপতি কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন ও সোনিয়া সোটোমায়োর। তারা রায়ের সমালোচনায় বলেন, ‘আদালত স্পষ্টভাবে ভুল করেছে এবং এর ফলে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’
জ্যাকসন বলেন, ‘কমপক্ষে এ রায়ের ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই বহু মানুষকে অকারণ মানবিক কষ্ট সহ্য করতে হবে।’
বিচারপতিরা আরো বলেন, এসব অভিবাসীকে হয় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে নতুবা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গিয়ে যেকোনো সময় বহিষ্কারের মুখোমুখি হতে হবে।
এ প্রোগ্রামের আওতায় প্রতি মাসে ৩০ হাজার পর্যন্ত অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হতো। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেয় এবং চলতি মাসের শুরুতে আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভেনিজুয়েলানকে বহিষ্কারের পদক্ষেপ নেয়া হয়।
সর্বশেষ মামলাটি শুরু হয় যখন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম অভিবাসীদের অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদার ১৮ মাসের বর্ধিতকরণ বাতিল করেন। তিনি এর কারণ হিসেবে ভেনেজুয়েলায় নিকোলাস মাদুরোর ‘স্বৈরাচারী’ সরকারকে দায়ী করেন।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাদের বিকল্প কোনো আইনি সুরক্ষা নেই, তাদের ৩০ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।
ভেনেজুয়েলান মার্কিন ককাসের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যাডেলিস ফেরো বলেন, এ নীতির চূড়ান্ত লক্ষ্যই হচ্ছে এই মানুষগুলোকে আইনি মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে বহিষ্কারের শিকার বানানো।
প্রথমে একটি জেলা আদালত এ সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। আদালতটি যুক্তি দিয়েছিল, এটি অবৈধভাবে দ্রুত বিতাড়ন প্রক্রিয়া ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ ব্যবহার করছে যা সাধারণত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য, সরকারি প্রোগ্রামে সুরক্ষিত অভিবাসীদের জন্য নয়।
তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়, ফলে মামলা চলমান থাকা অবস্থায়ও ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের আইনি মর্যাদা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিদেশী অপরাধীদের হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো আগমন’ রুখতে অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তার গণ বহিষ্কারের নীতি একাধিকবার আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, যেখানে আদালত অভিবাসীদের প্রাপ্য আইনি অধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে মত দেয়।
ট্রাম্প প্রশাসন এসব রায়কে প্রায়শই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ওপর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব করার প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে।
সূত্র : বাসস